ক্রিপ্টোকারেন্সি বাংলাদেশে খুব বেশী জনপ্রিয়তা পায় নি। সারাবিশ্বে ক্রিপ্টোকারেন্সির গ্রহণযোগ্যতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি পেমেন্ট কোম্পানি “ট্রিপল এ” এর তথ্য অনুযায়ী, সারাবিশ্বে বর্তমানে প্রায় ৪২ কোটি মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করছে। ২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিটকয়েনের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭৩০০০% এর থেকেও বেশি এবং ধারণা করা হচ্ছে এই বৃদ্ধির হার ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে। ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে যখন সারাবিশ্বে এত তোলপাড়, তখন বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির অবস্থান কোথায়? বাংলাদেশের মানুষ কি আদৌ ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে জানে? কতজন মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করছে কিংবা কতজন মানুষ বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করেছে? এইসব নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল।
বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা কখনোই ছিল না, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনপ্রিয়তার হার বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। বাংলাদেশে কখন সর্বপ্রথম মানুষ বিটকয়েন কিংবা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার শুরু করে তার কোন নির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিটকয়েন ফাউন্ডেশন এর এশিয়া অঞ্চলের সর্বপ্রথম সদস্য ছিল বাংলাদেশ। বিটকয়েন ফাউন্ডেশন ২০১২ সালে পিটার ভেসেনেস প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিটকয়েনের অন্যতম জনপ্রিয় ডেভেলপার গ্যাভিন আন্দ্রেসেনকে চিফ সাইন্টিস্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এই ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ছিল বিটকয়েন নিয়ে বিশ্বব্যাপী যেসব মিথ চালু ছিল কিংবা মানুষ যেভাবে বিটকয়েনকে মানি লন্ডারিং এর মুল হাতিয়ার হিসেবে দেখছিল, সেইসব ভ্রান্ত ধারণা দূর করা।
মূল আলোচনায় ফিরে আসা যাক। বাংলাদেশ এশিয়া থেকে সর্বপ্রথম বিটকয়েন ফাউন্ডেশনের সদস্য হয়। যদি আমরা বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির পরিস্থিতির কথা চিন্তা করি, তাহলে এটা আসলে বিশাল অর্জন বলা যায়। বিটকয়েন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ শাখার সভাপতি ছিলেন সজীব (ফেসবুক- কিং সজীব)। এছাড়াও উক্ত শাখার সদস্য হিসেবে ছিলেন সাদিয়া সুলতানা মৌ, মিজানুর রহমান (সম্ভাব্য ফেসবুক আইডি- মিজানুর রহমান সোহেল) এবং জামিল(সম্ভাব্য ফেসবুক আইডি- জামিল আক্তার)।
বাংলাদেশ বিটকয়েন ফাউন্ডেশনের সদস্য হওয়ার কিছুদিন পরেই বাংলাদেশ ব্যাংক বিটকয়েন ব্যবহার করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা দেয়। তখন থেকে বিট কয়েন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য পরবর্তীতে বিটকয়েন ফাউন্ডেশন এর মুল সংস্থার কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। এর কারণ অবশ্য ভিন্ন। ধীরে ধীরে বিটকয়েন নিয়ে মানুষের মধ্যে থাকা ভ্রান্ত ধারণার পরিবর্তন হয়। ফলস্বরুপ, এই ফাউন্ডেশনের প্রয়োজনীয়তা আর ছিল না।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক বিটকয়েন ব্যবহার থেকে মানুষকে দূরে থাকতে আহ্বান জানিয়ে পুনরায় বিবৃতি দেয় এবং এখন পর্যন্ত সেটাই বহাল আছে। বিটকয়েনের বৈধতার দিক চিন্তা করলে বাংলাদেশ এখন সেই ২০১৭ সালের ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ।
বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার
বাংলাদেশে সুনির্দিষ্টভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের তথ্য কেউ এখনো বলতে পারবে না। তবে, এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত সেকথা যে কেউ বাইন্যান্স পিটুপি এর ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের দিকে চোখ রাখলে খুব সহজেই বলে দিতে পারবে। বাইন্যান্স পিটুপি তে বর্তমানে লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। এছাড়াও, কুকয়েন এবং আরো অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জে প্রতিনিয়ত মানুষ বিকাশ, নগদ কিংবা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। গত কিছুদিন আগে, বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার নিয়ে কয়েনআলাপ একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে। উক্ত আর্টিকেলে দেখা যায় বেশ কিছু সোর্সের ভিত্তিতে, বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি।
ট্রিপল এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ২.৪% মানুষ তথা প্রায় ৪০ লক্ষ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারকারী রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে ব্যাংকিং খাতকে ডিজিটাল করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন, দ্রুততর লেনদেন এবং আরো অনেক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ব্যাংকিং খাতকে ডিজিটাল করার প্রয়াস চালাচ্ছে। ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সংবাদ অনুযায়ী, এর প্রেক্ষিতে সরকার ডিজিটাল কারেন্সি নিয়েও কাজ করার চিন্তাভাবনা করছে। অবশ্য এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ব্লকচেইন এর মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে যাদের মধ্যে প্রাইম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক এবং এইচ.এস.বি.সি ব্যাংক অন্যতম।