যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিখ্যাত ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ Coinbase (কয়েনবেস) তাদের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে বৈশ্বিক পরিকল্পনার দিকে এগোচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের প্রচারণার অংশ হিসেবে তারা এবার যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ক্রিপ্টো ট্রেডিং প্লাটফর্ম স্থাপনের চিন্তাভাবনা করছে, সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে ব্লুমবার্গ। তবে, কয়েনবেসের(Coinbase) নতুন এই স্থাপনা কোথায় হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে
ব্লুমবার্গের ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জানা যায়, ইতোমধ্যে কয়েনবেস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে একটি প্লাটফর্ম স্থাপনের বিষয়টি মোটামুটিভাবে নিশ্চিতভাবে আলোচনায় এসেছে। এটির প্রাতিষ্ঠানিক রুপদান করতে ক্লায়েন্ট এবং বিনিয়োগ সংস্থাগুলিও রয়েছে বলে জানা গেছে। এমতাবস্থায়, Coinbase-এর যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তাদের কার্যক্রম চালাতে কোন ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন, কাজের প্রকৃতি কেমন হবে বা কিসের ভিত্তিতে হবে সে ব্যাপারে কোন স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। কয়েনবেস তাদের জন্মভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সদর দফতর ছাড়াও, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডে বেশ শক্তভাবেই তাদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমোদনের পাশাপাশি, কয়েনবসের ইতালি, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডে “ইউকে ফিনেনশিয়াল কন্ডাক্ট” কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করার লাইসেন্স আছে। বিখ্যাত এই এক্সচেঞ্জটি স্থানীয় নিয়মকানুন মেনে চলতে অন্যান্য বড় মার্কেটগুলোতে আরো প্রয়োজনীয় নিবন্ধন এবং লাইসেন্স সংগ্রহের কাজ ও বেশ এগিয়ে নিয়েছে।
শুধু কী বিস্তারের আশাতেই এরকম পদক্ষেপ?
হুট করে কয়েনবেস কেন আন্তর্জাতিক বাজারের দিকে এভাবে নজর দিচ্ছে তা নিয়ে যথেষ্ট জল্পনা-কল্পনা আছে। কেউ কেউ মনে করছেন যে, এই এক্সচেঞ্জটি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের আয়তন বাড়াতে চাচ্ছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। Coinbase বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বলে বিবেচিত হলেও বিশ্ব বাজারে Binance এর মত এক্সচেঞ্জগুলোর সাথে বেশ শক্তিশালী প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
এই মাসের শুরুর দিকে Coinbase ঘোষণা করেছিলো, তারা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বের(Strategic Partnership) ফলে সিঙ্গাপুরে তাদের রিটেইল প্লাটফর্ম আপডেট করছে। এই চুক্তির অংশ হিসেবে Coinbase গ্রাহকদের স্থানীয় ব্যাংকগুলো তাদের একাউন্ট থেকে অর্থ স্থানান্তর করার অনুমতি দিবে, যার ফলে সিঙ্গাপুরে অবস্থিত Coinbase গ্রাহকরা বিনামূল্যে স্থানীয় “ব্যাংক ট্রান্সফার” ব্যবহার করেই তাদের এক্সচেঞ্জ অ্যাকাউন্ট থেকে “ক্যাশ ইন” কিংবা “ক্যাশ আউট” করতে পারবেন। এই কাজের মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের অর্থ-সম্পদের উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ পাবেন বলে আশা করছে এক্সচেঞ্জটি। এই পার্টনারশিপের আগে Coinbase গ্রাহকদের এক্সচেঞ্জের লেনদেনের জন্য ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হতো।
এদিকে কয়েনবেস সিঙ্গাপুরের সিইও এবং আঞ্চলিক পরিচালক হাসান আহমেদ বলেছেন,
“দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া একটি ক্রিপ্টো-ফরোয়ার্ড অঞ্চল যেখানে, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো বাজারে ক্রিপ্টো ধরে রাখার এবং ব্যবহার করার জন্য প্রচুর চাহিদা আছে”।
সাম্প্রতিক সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (SEC) অন্যান্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষগুলো ক্রিপ্টো প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর কঠোর হয়ে আসেছে। সিগ্নেচার ব্যাংকে প্রায় ২৪০ মিলিয়ন ডলার নগদ আটকে যাওয়ার পরে কয়েনবেস বেশ ব্যাঙ্কিং সমস্যার সম্মুখীন হয়৷ ক্ল্যাম্পডাউন সত্ত্বেও, কয়েনবেস তাদের গ্রাহকদের যোগাযোগ অব্যাহত রেখে জানিয়েছে, তাদের স্টেকিং প্রোগ্রাম চলমান থাকবে।
এছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ চলমান ব্যাংকিং সংকটে তাদের ভূমিকার জন্য ক্রিপ্টো প্রতিষ্ঠানগুলোকে আটকানোর পদক্ষেপ হিসেবে কয়েনবেসকে বাধ্য করেছিল। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রধান ব্যাংক, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক, সিলভারগেট ব্যাংক এবং সিগনেচার ব্যাংক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে, যা ইনভেস্টরদের উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে।