ক্রিপ্টোকারেন্সি নিউজ
ক্রিপ্টোকারেন্সি বনাম স্টক
Published
1 year agoon
By
writrovertক্লাসের কিছু ছাত্র থাকে যার রেজাল্ট বা আচরণ ভালো হোক কিংবা খারাপ, আলোচনায় থাকে সবসময়ই। ক্রিপ্টোকারেন্সি এখনকার সময়ে ক্লাসের সেই ছাত্রের মতো, যাকে আপনি পছন্দ কিংবা অপছন্দ যাই করেন না কেন অর্থনৈতিক আলোচনায় তাকে আপনার রাখতেই হবে।২০২১ সালে ৩ ট্রিলিয়নেরের ঘরে পৌছানোর পর Coinmarketcap.com অনুসারে এইসব ডিজিটাল কারেন্সির মোট মূল্য প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার। আর এরমধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে বিটকয়েন যার মূল্য প্রায় ৫১২ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। স্বল্প জ্ঞান আর হাজার আশা নিয়ে এখন চার্লি চ্যাপলিনের গোল্ড রাশ মুভির মতো করেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বিনিয়োগকারীরা। ক্রিপ্টোকারেন্সির এই দ্রুত পরিবর্তনের ফলে অনেক বিনিয়োগকারী তাদের পোর্টফোলিওতে প্রথাগত স্টকের বদলে ক্রিপ্টোকে বেছে নিতে চাইছে। আবার কেউ কেউ সন্দিহান দিনশেষে কোনটা মূলত ভালো সেটা নিয়ে। প্রথমে বলতে গেলে স্টক এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যটি হচ্ছে, একটি স্টক হচ্ছে একটি ব্যবসার মালিকানার অংশ(অর্থমূল্যে)। আপনি যখন কোন কোম্পানির একটি স্টক কিনেন তখন মূলত ওই কোম্পানির মোট মূল্যের হিসাবে আপনার বিনিয়োগকৃত অর্থমূল্যের অংশীদার আপনি কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রকৃতপক্ষে সেরকম নয়। যেসব ক্রিপ্টোর দীর্ঘমেয়াদী ট্র্যাক রেকর্ড আছে তাদের কোন একটা আপনি যদি কিনতে চান, তাহলে আপনি আসলে কী কিনছেন এটা জানা জরুরি। তার পাশাপাশি স্টকের মতো গতানুগতিক বিনিয়োগের সাথে তারা আসলে কীভাবে নিজেদের তুলনা করছে তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কি ক্রিপ্টোকারেন্সি বা স্টকগুলিতে বিনিয়োগ করা উচিত?
বিনিয়োগকারী হিসেবে কেউ ঠিক কিসে বিনিয়োগ করছে সেটা জানা বা বোঝা যেকোন বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর কাজ। বিনিয়োগের ঝুঁকি এবং রিওয়ার্ড তার পাশাপাশি বিনিয়োগের সাফল্য পেতে হলে কী করতে হবে সেটা বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি একজন বিনিয়োগকারীর কাছে এই ধরনের তথ্য না থাকে, তাহলে সে তার লাভ-ক্ষতির সীমাবদ্ধতা হিসাব করতে পারবেনা। সে ক্ষেত্রে, এই ধরনের বিনিয়োগকে জুয়া বা গ্যাম্বলিং বলাই শ্রেয়।
স্টক এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের জানতে হবে এরকম কিছু বিষয়ে নীচে আলোচনা করা হলো।
স্টক ও ক্রিপ্টোকারেন্সি
যেকোন কোম্পানির মূলধন অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শেয়ারে ভাগ করা থাকে এবং প্রত্যেকটি শেয়ারের একটি অর্থনৈতিক মূল্য থাকে। একেকটি ভগ্নাংশ একেকটি শেয়ার হিসেবে চিহ্নিত। । সবগুলো শেয়ারের সামষ্টিক রূপকে স্টক বলা হয়।
কেন স্টকের দাম বাড়ে কমেঃ স্টকের দাম বাড়া বা কমার সাথে সংশ্লিষ্টদের প্রতিষ্ঠান কিংবা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান জড়িত।অর্থনৈতিক অবস্থান ভাল হলে মানুষের আয় স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে । এতে করে মৌলিক চাহিদা মেটানোর পর অবশিষ্ট অর্থ একজন মানুষ শেয়ার বাজারে স্টক ক্রয় করে বিনিয়োগ করতে পারে।ব্যাপারটি যখন একই সময়ে অনেকগুলো জনসমষ্টির মানুষ বিনিয়োগ করে তখন বিনিয়োগ পাওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারের চাহিদাও বৃদ্ধি পায় । আর চাহিদা বাড়ার সাথেসাথে স্টকের দাম ও বাড়তে থাকে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম কেন বাড়ে কমেঃ যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে নগদ অর্থের সম্পর্ক সরাসরি নয় তাই এই কারেন্সির মূল্য পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে দায়ী ফিনেনশিয়াল সেন্টিমেন্ট দ্বারা পরিচালিত অনুমান। মার্কেট সেন্টিমেন্টের পরিবর্তনের সাথে সাথে এর দামেরও পরিবর্তন হয় এবং কখনও কখনও সেটা ব্যাপকভাবেই হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিয়োগ সফল হওয়ার জন্য, আপনাকে অবশ্যই এটির জন্য আপনার কেনা দামের চেয়ে চেয়ে বেশি মূল্যে আপনার কাছ থেকে এটি কিনতে হবে৷ অর্থাৎ, আপনার সে বাজার আপনার চেয়ে বেশি আশাবাদী হতে হবে।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের সুবিধাঃ
প্রচলিত মুদ্রার বিড়ম্বনার বিপরীতঃ কিছু বিনিয়োগকারীদের জন্য, ক্রিপ্টোকারেন্সি সবচেয়ে বড় আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার কারণ হল এর বিকেন্দ্রীকৃত বা ডিসেন্ট্রালাইজড পদ্ধতি। কোন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় যাদের আসল কাজই হলো মূদ্রা ছাপানো আর মুদ্রাস্ফীতি তৈরি করা। ক্রিপ্টোকারেন্সিকে “ডিজিটাল গোল্ড” আখ্যা দিয়ে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করে থাকেন এটা মুদ্রাস্ফীতি থেকে বাঁচাতে সক্ষম। প্রচলিত মূদ্রার এমন অনেক বিড়ম্বনাই আছে যেগুলো ক্রিপ্টোতে নেই। বিনিয়োগের জন্য এটা বেশ ভালো ব্যাপার।
আকাশচুম্বী লাভের সম্ভাবনা: ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয় আপনার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় লাভের সম্ভাবনা তৈরি করে। বেশ কয়েকটি ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রথম চালু হওয়ার পর থেকে বর্তমানে তাদের দাম আকাশচুম্বী । এই লাভগুলি হল প্রধান কারণ মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার এটাও একটা বিশেষ কারণ।, কিন্তু মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়াও তৈরি হয় মার্কেটে।
কয়েনের ক্রমবর্ধমান সংখ্যাঃ ক্রিপ্টোকারেন্সির শুরুর দিনগুলোতে কয়েন কম থাকলেও দিনেদিনে বেশ প্রসার ঘটেছে।বর্তমানে প্রায় ২৩ হাজারের কাছাকাছি ক্রিপ্টো কয়েন বিদ্যমান। এটা যেকোন বিনিয়োগের জন্য অনেক অপশন নিয়ে আসে। তাই ভেবেচিন্তে উপযুক্ত ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করতে পারলে ভালো করার সম্ভাবনা থাকে।
ডিজিটাল মুদ্রায় ব্যাপক আগ্রহঃ বিনিয়োগকারী, কোম্পানি এবং সরকারের কাছ থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি আগ্রহ চারদিকেই বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। টেসলা তার ব্যালেন্স শীটে বিটকয়েন রাখা এবং রিভার্সিং কোর্সের আগে পেমেন্ট হিসেবে ডিজিটাল কারেন্সির এক্সেস দেয়া সেটাই প্রমাণ করে। এল সালভাদর ২০২১ সালে বিটকয়েনকে আইনি দরপত্র হিসাবে গ্রহণ করে। ডিজিটাল মুদ্রার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক হতে পারে।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের অসুবিধা
বাজারের অস্থিরতা: ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার খুবই অস্থির বাজার। ২০১৮-২০২৩ এর ক্রিপ্টো বাজারের গ্রাফ দেখলেই সেটা বুঝতে পারবেন। ফোর্বসে উঠে আসা ক্রিপ্টোবান্ধব যতো উদ্যোক্তা ফ্রন্ট পেজে এসেছিলেন তাদের অনেকেই অস্থিরতার বাজারে হারিয়ে গেছেন। আবার নতুন মিলিয়নিয়ার বা বিলিয়নিয়ারের মুখও দেখা গেছে অবশ্য।
সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি: ক্রিপ্টোকারেন্সিতে আগ্রহী লোকজন ক্রিপ্টোকে পছন্দ করার প্রথন কারণ এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিন্তু সাইবার দুনিয়া এটার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত বলে অনেকভাবেই স্ক্যামের শিকার হতে হয় ভোক্তাকে এবং আরেকটি সমস্যা হচ্ছে ইরিভার্সেবল ট্রাঞ্জেকশন। একবার যদি আপনি ভুল করে ভুল ঠিকানায় ট্রাঞ্জেক্ট করেন সেটা ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। তবে এগুলোকে সিস্টেম ফেইলিউর হিসেবে ধরে এগুলো উতরানো সময়ের ব্যাপার।
স্টকে বিনিয়োগের সুবিধা
ভালো রিটার্নের ইতিহাসঃ দীর্ঘমেয়াদে S&P 500 (স্টক ইনডেক্স) প্রায় ১০% ফেরত দিয়ে, স্টকগুলির বিনিয়োগ রিটার্ন তৈরির দীর্ঘ ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। যদিও স্টকগুলি স্বল্পমেয়াদে বেশ অস্থির হতে পারে, তবে সেগুলি ধরে রাখতে পারলে লাভ পাওয়া যায়।
অন্তর্নিহিত মূল্য আছেঃ একটি স্টক একটি কোম্পানিতে একটি মালিকানার প্রতিনিধিত্ব করে এবং সময়ের সাথে সাথে এর মূল্য অন্তর্নিহিত মূল্য কোম্পানির সাফল্যের উপর নির্ভর করে। কোম্পানিগুলির নিজস্ব সম্পদও এসব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
অ্যাক্সেসযোগ্যঃ আজকাল অনেক অনলাইন ব্রোকার ট্রেডিং ফি শূন্য করার কারণে স্টকে বিনিয়োগ করা আগের চেয়ে সহজ। তবে সেটাও অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সম্ভব হয়েছে ক্রিপ্টো রেভুলেশনের জন্য৷ আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী যখন আপনাকে ছাড়িয়ে যেতে চাইবে আপনি গ্রাহক ধরার লক্ষ্যে ছোটখাটো লাভের অংশ ছেড়ে দেবেন এটাও বেশ পরিচিত স্ট্রাটেজি।
শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণঃ স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকার এবং কোম্পানিগুলি বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। কোম্পানিগুলিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের নির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহ করতে হয় । কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিখুঁত হয়না তবে স্টকগুলোর জন্য বেশকিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা আছে।
স্টক বিনিয়োগের অসুবিধা
অধিক লাভের কম সম্ভাবনাঃ S&P 500- এর মতো ব্রড স্টক ইনডেক্সে অধিক লাভের সম্ভাবনা কম থাকে যা আবার ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে সাধারনভাবেই দেখতে পাওয়া যায়। দীর্ঘ মেয়াদে স্টকগুলি প্রায় ১০ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছিলো যেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির জন্য একদিনে ১০ শতাংশ সরানো অস্বাভাবিক নয়।
পরিশেষ
অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করা খুবই কঠিন বিষয়। পৃথিবীতে প্রতিটি সিস্টেমের বিপরীতেই সিস্টেম লস থাকে। সব জিনিসেরই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা থাকবে। তাই এই তর্কও আজীবন চালানো সম্ভব যে কোনটি বেশি লাভের মুখ দেখবে। লাভ খুবই আপেক্ষিক বিষয়। আপনি ব্যাংকে যদি ১ লাখ টাকা জমার বিনিময়ে ৫ বছর পর ২ লাখ হিসেবে রিটার্ন পান সেটা আদৌ লাভ কিনা সেটা অনেকগুলো ফ্যাক্টরের উওঅঅর নির্ভরশীল। যদি ব্যাংক বা বিভিন্ন মাধ্যম আমাদেরকে এটা লাভ হিসেবেই দেখায়। হতে পারে ওই ৫ বছর পর এক লাখ টাকা দিয়ে যে জীবনমান যাপন করা যায় সেটা ৫ বছর আগে ৩ লাখের সমান। তবে এতটুকু সত্যি, আপনি যতো ঝুঁকি নিবেন ততো বড় লাভের রিটার্ন আশা করতে পারবেন। অর্থনীতির এটাই রূঢ় সত্য। স্টকের সাথে আপনি যদি ক্রিপ্টোর তুলনায় যান তবে কিছু জড়তা পাবেন এতটুকু সত্য। তবে দুইটা ভিন্নধর্মী মার্কেটের সময় যদি আপনি লক্ষ্য করবেন অনেক দিক থেকেই ক্রিপ্টো অগ্রগামী। আপনার অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করবেন সে ব্যাপার একান্তই আপনার ব্যক্তিগত বিচার বিবেচনায় হওয়া উচিৎ কিন্তু মার্কেট এনালাইসিস করতে ভুলবেন না। যেকোন ব্যবসায় সবচেয়ে বড় ইনভেস্টমেন্ট ওই ব্যবসা সম্পর্কে আপনার জ্ঞান।