ক্রিপ্টো প্রেমীদের জন্য সুসংবাদ নিয়ে এসেছে হালের জনপ্রিয় ইন্সট্যান্ট মেসেজিং এপ্লিকেশন “টেলিগ্রাম” (Telegram)। এই এপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা এখন থেকে তাদের চ্যাটের মধ্যে দিয়েই একে অপরকে USDT( টেথার) পাঠাতে পারবেন। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখা ভালো, মার্কেট ক্যাপ অনুসারে বিশ্বের বৃহত্তম স্টেবলকয়েন হচ্ছে টেথার(Tether) বা ইউএসডিটি (USDT)। এর আগে শুধুমাত্র বিটিসি বা বিটকয়েন এবং টনকয়েনের জন্য টেলিগ্রামের এই সেবা এভেইলেবল ছিলো।
২২শে মার্চ বুধবার CoinDesk-এর সাথে শেয়ার করা একটি ইমেলের সূত্রানুযায়ী জানা যায় টেলিগ্রাম ক্রিপ্টো কেনা-বেচা করার জন্য মেসেজিং এপের সুবিধাকে আরো ত্বরান্বিত করতে, টেলিগ্রাম তাদের বট(Bot) @wallet-এ USDT সংযোজন করে। টেলিগ্রামের মত মেসেজিং এপে ক্রিপ্টোকারেন্সি পাঠানোর এই কাজটি অনেকটা ছবি বা মেসেজ পাঠানোর মতোই সহজ। মূলধারার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের এরকম সুবিধাকে বেশ ইতিবাচক বলেই মনে করছেন ক্রিপ্টো অনুসারীরা।
ইউএসডিটির(USDT)পরিচয়ঃ
ক্রিপ্টো দুনিয়ায় ইউএসডিটি’কে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য যা কিছুই বলা হবে সবই আসলে “ডেজা ভ্যু” (Deja Vu একটি স্প্যানিশ শব্দ, যার অর্থ আগে দেখেছে/শুনেছে/জেনেছে এমনকিছু)। তাও নিয়মরক্ষার জন্য সংক্ষেপে বললে, ইউএসডিটির জন্ম হয় ২০১৪ সালে টেথার লিমিটেডের হাতে ( হংকং-ভিত্তিক কোম্পানি iFinex Inc এর মালিকানাধীন)। এটি একটি ব্লকচেইন ভিত্তিক স্টেবলকয়েন, যাকে টেথার(Tether) নামেও চেনে সবাই। এর রেফারেন্স ফিয়্যাট কারেন্সি হচ্ছে আমেরিকান ডলার অর্থ্যাৎ প্রতিটি টেথার বা ইউএসডিটির মূল্য ১ ডলার(আমেরিকান)।
টেলিগ্রামের ক্রিপ্টো যাত্রাঃ
এর আগে, গত এপ্রিলে টেলিগ্রামের @wallet এর মার্কেটপ্লেসে বিটকয়েন (BTC) ও নিজস্ব কয়েন টন (TON) যুক্ত করে একই সুবিধা দেয়া শুরু হয়েছিলো এই এপটির গ্রাহকদের। দামের হুটহাট উত্থান-পতন বাদ দিলে অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো ইউএসডিটি (USDT) স্টেবলকয়েনও তার গ্রাহকদের বিভিন্নরকম সুবিধা দিয়ে থাকে তাই, যারা ক্রিপ্টো ইকোসিস্টেমে তাদের ক্রিপ্টোকারেন্সি রাখতে আগ্রহী তাদের জন্য এই ধরণের সুবিধা বেশ বড় রকমের সুসংবাদ। একই কারণে, টেলিগ্রাম সেবায় ইউএসডিটির এই নতুন সংযোজনটি পরস্পরকে (টেলিগ্রাম ও ইউএসডিটি) নতুন মাত্রা দেবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। নিজেদের ডেভেলপমেন্টে ব্লকচেইন টেকনোলজি ভিত্তিক ডিসেন্ট্রালাইজড কম্পিউটার নেটওয়ার্ক দিয়ে এই ধরনের সেবার যাত্রা শুরু করেছিলো টেলিগ্রাম।শুরুর দিকে “টেলিগ্রাম ওপেন নেটওয়ার্ক” নাম থাকলেও পরে “দ্য ওপেন নেটওয়ার্ক” নামেই নিজেদের পরিচয় দেয় এই প্রজেক্ট। ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)-এর হস্তক্ষেপের পর আইনি লড়াইয়ের কারণে এটি ২০২০ সালে পরিত্যক্তও ঘোষিত হয়েছিল। যদিও “TON Foundation” নামে ডাকা TON কমিউনিটির সদস্যরা নিজেদের অস্তিত্ব এখনো ধরে রেখেছে। এদিকে টেলিগ্রাম নেটওয়ার্ক নিজেদের এই প্রজেক্টে তেমনভাবে সরাসরি জড়িত রাখেনি কিন্তু TON-এর প্রতি একটা আগ্রহ তারা ধরে রেখেছে, যার উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছরের শেষের দিকে TON-এর জন্য ব্লকচেইন-ভিত্তিক নিলাম(Auction) প্ল্যাটফর্ম ফ্র্যাগমেন্ট তৈরি করেছিলো তারা।
পরিশেষে বলা যায়, এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলোই নিশ্চিতভাবে একদিন ক্রিপ্টো জগতকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করবে এবং ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্যতার সাথে সাথে এর জনপ্রিয়তাকে একসময় প্রয়োজনীয়তায় রূপদান করবে। মানুষ যত সহজে এখন মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে এরচেয়ে বেশি সহজভাবে হয়তো যেকোন ক্রিপ্টো লেনদেন করতে পারবে।