সম্প্রতি ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) জানিয়েছে, আমেরিকান নাগরিকরা অনলাইন জালিয়াতির কারণে গত বছর ১০ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।
দুষ্কৃতকারীরা বিভিন্ন রকমের ক্রিপ্টোকারেন্সি ইনভেস্টমেন্ট স্কিমের মাধ্যমে সেই অর্থের ২.৫৭ বিলিয়ন ডলার হাতবদলও করে নিয়েছে।
ক্রিপ্টো জালিয়াতি
ক্রিপ্টো মার্কেটে ২০২২ সাল ছিলো বিয়ারিশ বছর। এটার পরেও বছরটাতে ক্রিপ্টো অপরাধীদের পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ।এই চক্রটি বিটকয়েন এবং অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদ হাতিয়ে নিতে বিভিন্নরকম বিনিয়োগ স্কিমের নাম ব্যবহার করে আমেরিকান গ্রাহকদের কাছ থেকে ২.৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, ২০২১ সালে এটার পরিমাণ ছিল মাত্র ৯০৭ মিলিয়ন। এফবিআইয়ের প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করে স্ক্যামের শিকার হওয়ার সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে এবং এতে করে বিনিয়োগেকারীদের হাতে থাকা ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এজেন্সি আরো জানায়, এই ধরনের স্ক্যামগুলোতে মূল লক্ষ্য থাকে ৩০-৪৯ বছরের লোকজন। আগের এক গবেষণায় জানা গেছে যে, বয়স্ক লোকজন এই মার্কেটের দিকে এখনো বিশাল পরিমাণে না আগ্রহী না হলেও মধ্য বয়সের লোকজন ক্রিপ্টো জগতে বেশ সক্রিয় অবস্থানে থাকে। ঠিক কোন কোন উপায়ে ক্রিপ্টো স্ক্যামাররা লোকজনকে স্ক্যামের দিকে টেনে নেয় সেসব বিষয়ে এফবিআই কিছু পথ বাতলে দিয়েছে। তারা প্রায়ই লোকেদের লোভ-লালসা দেখিয়ে তাদের ওয়ালেটকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে বানানো স্ক্যামারদের নিজস্ব একাউন্ট লিকুইড মাইনিং এপ্লিকেশনের সাথে লিংক করার চেষ্টা চালায়। যেখানে ক্রিপ্টো হোল্ডাররা পুরস্কারের বিনিময়ে ডিসেন্ট্রালাইজড এক্সচেঞ্জে এসেট বা সম্পদ ধার দেয় তাকে লিকুইড মাইনিং বলে। আর এভাবেই তাদের ইনফরমেশনের এক্সেস নিয়ে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট বা ফান্ড হ্যাক করে।
আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্রিপ্টো রোমান্স স্ক্যাম
সম্প্রতি ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (FTC) একটি গবেষণায় চালায়, এই গবেষণার ফলে বেরিয়ে আসে যে, এই ধরনের স্ক্যামগুলি ২০২১ সালের জানুয়ারী থেকে ২০২২ সালের মার্চ মাসের মধ্যে হাজার সংখ্যক আমেরিকানকে সর্বশান্ত করেছে। সংখ্যায় প্রায় ১৮৫ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে এসব স্ক্যামাররা।
বেশিরভাগই দেখা যায় নিঃসঙ্গ ব্যক্তিদের একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে তারা তাদের প্রেমে পড়ার ভান করে।কোনরকমে বিভিন্ন ফন্দিফিকির করে একবার তাদের বিশ্বাস অর্জন করার পরে, তারা তাদের বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রজেক্টে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে। সেখানে বিনিয়োগের ফলে তাদের ভবিষ্যতে বিয়ে বা রোমান্টিক কোন ছুটি কাটাতে এই অর্থগুলো তাদের সাহায্য করবে বলেও অনেকসময় প্রলুব্ধ করে।
এই জালিয়াতি সম্পর্কে ব্যাংকলেস টাইম লিখেছে,
“রোম্যান্স স্ক্যামের শিকার হওয়া মানুষরা সব হারিয়ে একসময় বুঝতে পারেন যে, তাদের হৃদয় এতটাও স্মার্ট নয়। প্রেমের ব্যাকুলতার মূল্য তাদেরকে প্রতারকদের সহজ টার্গেট করে তোলে। তারা এমনভাবে তাদের মনে জায়গা করে নেয়, যেন তাদের টার্গেট করা ভিকটিম তাদের নাম শুনতেই ব্যাকুল হয়ে যায়, মূর্ছা যায় কিন্তু এরপরে যতক্ষণে তাদের হুঁশ ফিরে আসে ততক্ষণে তারা হাজার হাজার ডলার খুইয়ে আবার অর্থনৈতিকভাবেও নিঃস্ব হয়ে পড়ে।
ইদানীং এই ধরনের জালিয়াতি যুক্তরাজ্যেও বেশ জনপ্রিয় বলে মনে হচ্ছে। গতবছর অজ্ঞাতনামা একজন বৃটিশ ব্যক্তি “জিয়া” নামের এক মহিলার সাথে অনলাইনে চ্যাট করে ২০০,০০০ ডলার মূল্যের বিটকয়েন হারায়। তাকে সম্পর্কের এক পর্যায়ে একটি সন্দেহজনক অ্যাপে সম্পদ বরাদ্দ(Allocate) করার পরামর্শ দেয়। লোকটিও প্রেমের টানে আবেগের বশিভূত হয়ে এবং এই বিনিয়োগে দুর্দান্ত লাভ হবে শুনে তার কথামতো কাজ করে বসে। কথামতো কাজ করার কিছুক্ষণ পরেই, লোকটি আবিষ্কার করে তার ব্যালেন্স “জিরো” এবং তৎক্ষণাৎ মহিলার সাথে যোগাযোগ করতে গেলে ব্যর্থ হয়।
অন্যদিকে, এই বছরের শুরুর দিকে বৃটেনের নটিংহ্যামশায়ারের একজন পেনশনভোগী অধিবাসী একজন একই স্ক্যামের শিকার হয়ে প্রেম করতে গিয়ে তার ভালবাসার মূল্য দাঁড়িয়েছে ২০৭,০০০ ডলারের মত।
মূলত,নিজেকে একজন ইউএস আর্মি সার্জন হিসেবে পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তির প্রেমে মজে তার কথামতো একটি নির্দিষ্ট বিটকয়েন ওয়ালেটে অর্থ স্থানান্তর করেন তিনি। পরে অবশ্য তার স্থানীয় ব্যাংক ও পুলিশ অর্ধেকেরও বেশি অর্থ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল।