Connect with us

গাইডলাইন

লাইটনিং নেটওয়ার্ক; বিটকয়েন এর লেয়ার টু ব্লকচেইন

লাইটনিং নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিটকয়েন ইকোসিস্টেম এর খুব কম মানুষই জানে। এর কারণ সম্ভবত লাইটনিং নেটওয়ার্ক এর জটিলতা, মানে এইটা ব্যবহার করাটা একটু জটিল।

Published

on

লাইটনিং-নেটওয়ার্ক

লাইটনিং নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিটকয়েন ইকোসিস্টেম এর খুব কম মানুষই জানে। এর কারণ সম্ভবত লাইটনিং নেটওয়ার্ক এর জটিলতা, মানে এইটা ব্যবহার করাটা একটু জটিল। তবে, যারা আমাদের এই আর্টিকেল পড়বেন তারা আশা করি লাইটনিং নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং লাইটনিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন। আমরা এই আর্টিকেল এর শেষের দিকে লাইটনিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দেখাবো।

লাইটনিং নেটওয়ার্ক এর উৎপত্তি

বিটকয়েন এর ব্লক সাইজ বা প্রতিটা ব্লকে ১ মেগাবাইট (৪ ভার্চুয়াল মেগাবাইট) সমপরিমাণ তথ্য রাখা যায়। আমরা যে লেনদেনগুলো বিটকয়েন বা অন্যান্য কয়েনগুলো দিয়ে করে থাকি, সে লেনদেনগুলো আসলে বাইট আকারে ব্লকচেইনে সংরক্ষিত হয়ে থাকে। প্রতিটা লেনদেনের এইরকম সাইজ রয়েছে। লেনদেন এর সাইজ নির্ভর করে আপনার ইনপুট এবং আউটপুট এর উপর।

আবার, বিটকয়েন এর ব্লক কিন্তু চাইলেই পাওয়া যাবে এমনটা নয়। বিটকয়েন ব্লকচেইনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সাতোশি নাকামোতো প্রতিটা ব্লকের একটা গড় সময়ও ঠিক করে দিয়েছেন। বিটকয়েন এর প্রতিটা ব্লক গড়ে ১০ মিনিট পর পর সৃষ্টি হয় (সৃষ্টি হয় না বলে পাওয়া যায় বলাটা সঠিক)। এইটা যে ঠিক ১০ মিনিট হবে তা কিন্তু নয়। হতে পারে ২ মিনিটে ২টা ব্লক সৃষ্টি হল, আবার এমনও হতে পারে ৩০ মিনিটে একটাও ব্লক সৃষ্টি হয় নি। তবে, প্রতি ২০১৬ ব্লক পর পর একটা এডজাস্টমেন্ট হয় যাতে গড় সময় ১০ মিনিট থাকে।

উপরের দুইটা জিনিস যখন একটার সাথে আর একটা জুড়ে দিবেন তাহলে কিছু সমস্যা পাবেন। একটি ব্লকে যদি ১ মেগাবাইট (৪ ভার্চুয়াল মেগাবাইট) এর বেশি তথ্য রাখা না যায় এবং একটা ব্লক এর পর আর একটা ব্লক সৃষ্টি হতে যদি কখনো ৩০ মিনিট সময় লেগে থাকে, তাহলে যখন একসাথে অনেক মানুষ বিটকয়েন এ লেনদেন করতে যাবে তখন কি হবে? তখন অনেক লেনদেন পেন্ডিং থাকবে। একে বলা হয় বিটকয়েন নেটওয়ার্ক জ্যাম (নিজের ভাষায় বললাম, এইটা ইংরেজিতে বলে- bitcoin network congestion)। যখন এটা হয় তখন বিটকয়েন নেটওয়ার্কের ফি বৃদ্ধি পায়

আমরা অনেক সময় দেখি কাউকে বিটকয়েন পাঠালে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ১টা কনফারমেশন পাই না। আর কনফারমেশন ছাড়া পেমেন্ট কনফার্ম বলার ও সুবিধা নাই। যে কেউ চাইলে একটা লেনদেন বাদ দিতে পারে কিংবা কয়েকদিন এর মধ্যেও কনফার্ম না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যান্সেল হয়েও যেতে পারে। কনফারমেশন না পাওয়ার কারণ দুইটা। প্রথমত, একটি ব্লকের পর আর একটি ব্লক সৃষ্টি হওয়ার গড় সময়। দ্বিতীয়ত, লেনদেনে কম ফি দেওয়া।

যেহেতু মাইনার শুধু ১ মেগাবাইট (৪ ভার্চুয়াল মেগাবাইট) তথ্য রাখতে পারবে ১টা ব্লকে, মাইনার চাইলেও সব পেন্ডিং এ থাকা লেনদেনগুলো কনফার্ম করতে পারবে না। তখন মাইনার যে লেনদেনগুলোতে ফি বেশি দেয়া হয় শুধু সে লেনদেনগুলোই একটি ব্লকে গ্রহণ করে। এইখানে বলে রাখা ভালো, মাইনার আসলে আগে লেনদেন কোনগুলো ব্লকে গ্রহণ করবে সেগুলো ঠিক করে এবং পরে ব্লক খোঁজার কাজ করে। শেখার কোন বয়স নাই, আমি গতকাল এই ব্যাপারটা জানলাম।

যদি কম ফি দেয়া লেনদেনগুলো পেন্ডিং এ পরে থাকে তাহলে এর সমাধান কি? জোসেপ পুন এবং থাডিউস দ্রিজা বিটকয়েন এ লাইটনিং নেটওয়ার্কের প্রস্তাব দেন, যেখানে প্রতি ব্লকে ৮ জিবি তথ্য রাখা যাবে।

লাইটনিং নেটওয়ার্ক কি

লাইটনিং নেটওয়ার্ক বিটকয়েন ব্লকচেইনের উপর নির্মিত একটি অফচেইন বা লেয়ার-২ চেইন। অফচেইন বলার কারণ, লাইটনিং নেটওয়ার্ক এর লেনদেন বিটকয়েন নেটওয়ার্কের বাইরে সংঘটিত হয়। তবে, বিটকয়েন এর মূল ব্লকচেইনের এর সাথে রয়েছে এর সম্পর্ক। টেকনিক্যাল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমি দৈনন্দিন জীবন থেকে একটা ছোট উদাহরণ দেওয়ার চেষ্টা করছি যাতে আমাদের দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানীরাও বুঝতে পারেন লাইটনিং নেটওয়ার্ক কি।

গল্পে লাইটনিং নেটওয়ার্ক

এইটা স্রেফ গল্প। এইখানে কিছু ব্যাপার লাইটনিং নেটওয়ার্ক এ নেই কিন্তু বোঝার জন্য এই গল্প সহায়ক হবে। বইয়ে পড়া করিম আর রহিমের নামই ব্যবহার করলাম যেহেতু আমার লক্ষ্য দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানীরা যেন বুঝতে পারেন।

রহিম একজন দোকানদার। উনার কাছে ৫ টাকার অনেক পণ্য আছে কিন্তু ১০০ টাকার ভাংতি থাকে না কখনো। করিম রহিমের দোকানে প্রতিদিনই আসে। তার কাছেও আবার ১০০ টাকার নোট ছাড়া থাকে না কখনো, আবার সে ৫ টাকার বেশি খরচও করে না। একজন আবার অন্যজনকে বিশ্বাসও করে না। তাই রহিম করিমকে বাকিতে দিচ্ছে না, আবার করিমও ৫ টাকা খরচ করে ১০০ টাকা জমা রাখতে ভরসা পাচ্ছে না। তাহলে উপায়? রহিমের দোকানের পাশেই আর একটা দোকান আছে। ঐ দোকানদার এর নাম শফিক। রহিম এবং করিম দুইজনেই শফিক সাহেবকে বিশ্বাস করে।

রহিম তখন করিমকে বললো, “দেখেন ভাই, আমরা দুইজনেই যেহেতু দুইজনকে বিশ্বাস করতে পারি না এবং দুইজনেই শফিক ভাইকে বিশ্বাস করি, তাহলে উনার মধ্যস্থতায় আমরা লেনদেন করি।” সুন্দর বুদ্ধি না? দুইজনেই রাজি হলেন। শফিক সাহেবের কাছে তখন করিম ১০০ টাকা রাখলো এবং নিয়মিত রহিমের দোকান থেকে ৫ টাকার খরচ নিতে লাগলো। যেহেতু কেউ কাউকে বিশ্বাস করছেই না, শফিক সাহেবই হিসেবটাও তার খাতায় তুলে রাখছেন। যখনই করিম ১০০ টাকার খরচ নেয়া সম্পন্ন হল তখন শফিক সাহেব রহিমকে ১০০ টাকা দিয়ে দিল। এইখানে মাঝে একটা ব্যাপার আমি বলি নাই। শফিক সাহেব বিশ্বস্ত লোক কিন্তু তিনি ফ্রিতে কেন দুইজনের কাজ করবেন? যেহেতু কাজ বেশি না, উনি দুইজন থেকেই ৫ টাকা করে ফি রাখলেন। উনার লাভ হল ১০ টাকা। এইভাবে তিনি আজীবন দুইজনকে সেবা দিতে লাগলেন আর পাশাপাশি ১০ টাকা করে কামাই করতে লাগলেন।

টেকনিক্যাল দিক থেকে লাইটনিং নেটওয়ার্ক

গল্প বলা শেষ। গল্প বলার কারণ বুঝতে সুবিধা হওয়া। এখন তাহলে টেকনিক্যালি লাইটনিং নেটওয়ার্ক কি সেটা জেনে নেই।
১। সমস্যাঃ বিটকয়েন নেটওয়ার্কের ফি, ব্লক সাইজ এবং ব্লক টাইম সমস্যাটা আমাদের গল্পের ১০০ টাকার ভাংতি সমস্যা।
২। সমাধানঃ গল্পের শফিক সাহেব হচ্ছে লাইটনিং নেটওয়ার্ক এর লাইটনিং নোড যিনি দুইজনের মধ্যে একটা সেটেলমেন্ট করে দিয়েছেন।

আগেই বলেছি লাইটনিং নেটওয়ার্ক বিটকয়েন নেটওয়ার্কের বাইরের একটি চেইন। এইখানে লেনদেন বিটকয়েন মূল চেইনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না। লাইটনিং নেটওয়ার্ককে আপনি আলাদা একটা ব্লকচেইন বলে পারেন। কীভাবে সেটা পরের ধাপে নিজেই বুঝে যাবেন।

আমরা এখানে কাঁচাবাজারের উদাহরণ দিয়ে বিটকয়েন এর সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করবো।

আপনি অনেকগুলো দোকান থেকে কাঁচাবাজার কিনে থাকেন। প্রতিটা দোকানে গিয়ে আপনি বিটকয়েন পাঠাবেন, বিক্রেতা আপনার পাঠানো বিটকয়েন কনফারমেশন এর জন্য আপনাকে বসিয়ে রাখবে কারণ আপনি চাইলে কনফারমেশন হওয়ার আগে বিটকয়েন ট্রাঞ্জেকশন ক্যান্সেল করতে পারবেন। আপনার কতক্ষণ সময় লাগবে, কত ফি দেয়া লাগবে? অনুমান করতে পারছেন তো?

এইখানে লাইটনিং নেটওয়ার্ক কাজ করবে। আপনি বিটকয়েন পাঠাবেন মিলিসেকেন্ড সময়ে, কনফারমেশন এর জন্য অপেক্ষার চিন্তা নেই। ২০ টাকার আলু কিনতে গিয়ে ৩০ টাকা ট্রাঞ্জেকশন ফি দেওয়ার দরকার নেই। তাহলে আমরা দুইটা পক্ষ পেলাম যে লাইটনিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবে। আর এর সব করে দেবেন আমাদের শফিক সাহেব তথা লাইটনিং নোড তথা মধ্যস্থতাকারী। এইটাকে রুট বা ব্রিজও বলা হয়।

আমরা এইখানে তিনজন পেলাম যারা লাইটনিং নেটওয়ার্ক এর ইকোসিস্টেম এ সংযুক্ত।
১। ক্রেতা
২। বিক্রেতা
৩। শফিক সাহেব তথা লাইটনিং নেটওয়ার্ক নোড

লাইটনিং নেটওয়ার্ক লেনদেনের ধাপগুলো

প্রথমেই আপনাকে লাইটনিং নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করে এইরকম একটা ওয়ালেট ডাউনলোড করতে হবে। ইক্লেয়ার(Eclair), ইলেকট্রাম(Electrum) ইত্যাদি। সে বিটকয়েন ওয়ালেটে বিটকয়েন নিতে হবে। তারপর নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে-

১. ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই লাইটনিং নেটওয়ার্কের একটি নোডের সাথে সংযুক্ত হবে। এই সংযুক্ত হওয়াকে বলে চ্যানেল তৈরি করা অর্থাৎ ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই লাইটনিং নোডের সাথে চ্যানেল তৈরি করবেন। এইখানে বলে রাখি, লাইটনিং নেটওয়ার্ক এ হাজার হাজার নোড থাকতে পারে। তবে, যতক্ষণ ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই একটা নির্দিষ্ট নোডের সাথে চ্যানেল তৈরি করবে না, ততক্ষণ তারা দুইজন কোন লেনদেন করতে পারবে না।

চ্যানেল তৈরি করতে হলে লাইটনিং নেটওয়ার্ক থেকে দেয়া বিটকয়েন অ্যাড্রেসে আপনাকে বিটকয়েন পাঠাতে হবে আগে। এই পাঠানোটা অনেকটা স্বয়ংক্রিয়। আপনি যখন কোন চ্যানেলে জয়েন হবেন, তখন আপনার ওয়ালেট থেকে বিটকয়েন পাঠানোর জন্য একটা অপশন আসবে, সেটাকে আপনি অ্যাপ্রুভ করতে হবে। এই লেনদেনটা বিটকয়েন চেইনে সংঘটিত হয়। মনে করি আপনি ০.১০ বিটকয়েন নিয়ে চ্যানেল তৈরি করেছেন।

এরপর আর বিটকয়েন চেইনে কোন লেনদেন হয় না যতক্ষণ না আপনি ওই নোড থেকে বের হয়ে আসবেন। যেহেতু, আপনার কাঁচাবাজার প্রতিদিন লাগে, বের হওয়ার দরকার আছে কি? আবার আপনি যে নোডে চ্যানেল তৈরি করেছেন, সে নোডের সাথে বাজারের সকল দোকানদার নোড তৈরি করছে। এর মানে একটি নোডের সাথে চ্যানেল তৈরি করে আপনি বাজারের সকল দোকানদারকে পেমেন্ট করতে পারবেন।

২. চ্যানেল তৈরি শেষ। এখন আপনি শুধু দোকানে যাবেন, খরচ করবেন আর বিটকয়েন পাঠিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দোকান ছেড়ে চলে আসতে পারবেন। ধরুন, আপনি ৩টা দোকানে গেলেন। প্রতিজন থেকে ০.০০১ বিটকয়েন এর খরচ করলেন। যেহেতু আপনি যে নোডের সাথে চ্যানেল তৈরি করেছেন, সে নোডের সাথে ৩ জন দোকানদার যুক্ত ছিল, আপনি অনায়াসেই পেমেন্ট করতে পারবেন সবাইকে। নতুন করে আর কোন নোডের সাথে যুক্ত হওয়া বা চ্যানেল খোলা লাগবে না। যত লেনদেন করবেন সব শফিক সাহেবের মত এই লাইটনিং নেটওয়ার্ক নোড হিসেব রাখবে, সেটাও আবার উন্মুক্ত হিসেব। আপনি দেখতে পারবেন যে কোন সময়।

৩. মনে করুন, আপনি যে জায়গায় থাকতেন সেখান থেকে চলে যাবেন। অন্য কোন জায়গায়। তাহলে যে বাজারে এতদিন ছিলেন সেখানকার নোডের সাথে চ্যানেল রেখে কি লাভ। আপনি এতদিনে আপনার ০.১০ বিটকয়েন থেকে ০.০৭ বিটকয়েন খরচ করেছেন। বাকি ০.০৩ বিটকয়েন সেখানে রেখেই বা কি লাভ? তখন আপনি ওই চ্যানেল থেকে লিভ নিবেন, মানে বেরিয়ে আসবেন। লিভ নিলে আপনার মেইন ওয়ালেটে ০.০৩ বিটকয়েন চলে আসবে। এইখানে আবার একটা বিটকয়েন ব্লকচেইনে ট্রাঞ্জেকশন হবে। এই যে আপনি এত দোকানদারকে পেমেন্ট করলেন এগুলো বিটকয়েন এর মূল ব্লকচেইনে কোন রেকর্ড থাকবে না। এইজন্যই আমরা শুরুতে বলেছিলাম লাইটনিং নেটওয়ার্ক হল অফ চেইন ব্লকচেইন। আপনি যখন চ্যানেল তৈরি করছেন আর যখন চ্যানেল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, কেবল তখনই বিটকয়েন ব্লকচেইনে লেনদেন হবে। মাঝখানে সব লেনদেন লাইটনিং নেটওয়ার্ক এ হবে। সেগুলো একবারে ইন্সট্যান্ট, খুব কম ফি। কম ফি বলতে ১ কিংবা ২ কিংবা এর আশেপাশের পরিমাণ সাতোশি। ২ সাতোশি মনে করুন। একটা অনচেইন লেনদেনের জন্য কমের পক্ষে ১১১ সাতোশি দেয়া লাগে বর্তমানে আর সেটা লাইটনিং নেটওয়ার্ক এ মাত্র ১ অথবা ২ সাতোশি। নিচের ছবিতে দেখুন কীভাবে একটি নোডের সাথে একজন বা অধিক ক্রেতা চ্যানেল তৈরি করে অনেকজন বিক্রেতার সাথে লেনদেন করতে পারে।

কিভাবে লাইটনিং নেটওয়ার্ক এর একটি নোডের সাথে একজন বা অধিক ক্রেতা চ্যানেল তৈরী করে অনেকজন বিক্রেতার সাথে লেনদেন করতে পারে।

লাইটনিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার

এখন চলুন আমরা লাইটনিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আসি। আপনাকে কোন কিছু কিনতে হবে না। আমরা টেস্টনেট বিটকয়েন দিয়ে লাইটনিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্টারব্লকস থেকে একটা কফি অর্ডার করবো। কফি পাওয়ার আশা করবেন না। অর্ডারের মধ্যেই শেষ।

  • প্রথমেই আপনাকে ইক্লেয়ার টেস্টনেট ওয়ালেট ডাউনলোড করতে হবে। অবশ্যই এইটা মোবাইল ওয়ালেট। আপনি পিসি নিয়ে তরকারি দোকানে যাবেন না নিশ্চয়ই। তারপর ওইখানে আপনার ওয়ালেট তৈরি করুন।
  • আপনার ওয়ালেট থেকে একটি অ্যাড্রেস নিন এবং একটি টেস্টনেট ফসেটে গিয়ে আপনার অ্যাড্রেসে অল্প কিছু টেস্টনেট বিটকয়েন নিন। এইটা ব্যবহার করতে পারেন- https://tbtc.bitaps.com/
  • টেস্টনেট বিটকয়েন নিয়ে ট্রাঞ্জেকশন কনফার্ম হওয়া অবধি অপেক্ষা করুন। কনফার্ম হলে আপনার ওয়ালেটে চ্যানেলস (Channels) অপশনে যান। সেখানে সবুজ যোগ (+) চিহ্নে ক্লিক করুন। তারপর নিচে লেখা পাবেন- ACINQ NODE, এইটাতে ক্লিক করুন। এইটা হলো নোড বা শফিক সাহেব।
  • তারপর দুইটা অপশন পাবেন। Use all available funds এবং Request Liquidity from this node, দুইটাতেই টিক দিন। ফান্ডিং ফি ৪/৫ সাতোশি পার বাইট দিন এবং ওপেন (Open) এ ক্লিক করুন।
  • একটু সময় লাগবে চ্যানেল তৈরি হতে। তারপর আপনি এইখানে যান- https://starblocks.acinq.co/ এবং যে কোন একটা পণ্য নির্বাচন করুন। তারপর Add to cart এ ক্লিক করুন। উপরে কার্টে আপনার পণ্য তালিকাভুক্ত হবে।
  • সেখানে চেক আউট (Checkout) এ ক্লিক করুন। আপনাকে একটা QR Code দেবে। আপনি চাইলে এই কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট করতে পারেন অথবা পেমেন্ট এর লিংকে (OPEN WITH YOUR WALLET) ক্লিক করেও পেমেন্ট করতে পারেন। পেমেন্ট করে আবার স্টারব্লকস এ আসুন আর ম্যাজিক দেখুন। অলরেডি পেমেন্ট চলে গেছে। আপনার পেমেন্ট কনফার্ম হয়েছে।

কিভাবে পেমেন্ট গ্রহণ করবেন

লাইটনিং নেটওয়ার্ক দিয়ে পেমেন্ট গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আপনি চাইলেই পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন না। মনে করুন, আপনি ০.০১ বিটকয়েন নিয়ে একটা চ্যানেল এ সংযুক্ত হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে যতক্ষণ না আপনি কিছু বিটকয়েন খরচ করছেন, আপনি আসলে কোন বিটকয়েন গ্রহণ করতে পারবেন না। একটা চ্যানেলে আপনি যত বিটকয়েন নিয়ে ঢুকবেন ওইটা আমার লিমিট। আপনি ওইখান থেকে যে পরিমাণ বিটকয়েন খরচ করবেন কেবল সে পরিমাণ বিটকয়েন অন্যদের কাছ থেকে গ্রহণ করতে পারবেন। মনে করুন, আপনার ০.০১ বিটকয়েন থেকে আপনি ০.০০৫ বিটকয়েন খরচ করেছেন। তাহলে, এক্ষেত্রে আপনি উক্ত চ্যানেলের মাধ্যমে ০.০০৫ বিটকয়েন গ্রহণ করতে পারবেন।

চ্যানেল বন্ধ করা

আগের যে উদাহরণ আমরা দিয়েছি যেখানে আপনি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন যার কারণে আপনার সবজি বাজারে শফিক সাহেবের সাথে যে চ্যানেল ছিল সেটা বন্ধ করতে চান। বন্ধন করার দুইটা পন্থা আছে।

১। শফিক সাহেবের সাথে কথাবার্তার মাধ্যমে।

২। আপনার যখন ইচ্ছে।

এক নাম্বার পন্থা- দুইজন কথা বলে নিলেন যে আপনি চ্যানেলটা বন্ধ করতে চান। তাই লিভ নিবেন। শফিক সাহেবের কাছে তো হিসেব আছেই। বাকি বিটকয়েন দিয়ে আপনার সাথে চ্যানেল বন্ধ করে দিবে। এইখানে আসলে সরাসরি কথাবার্তার কিছু নেই, সবই আপনার ওয়ালেট আর শফিক সাহেবের নোডের মধ্যে কথা হবে।

দুই নাম্বার পন্থা- এমনও হতে পারে শফিক সাহেব এর নোড অনলাইনে নেই কিন্তু আপনি চাচ্ছেন ওই নোডের সাথে লেনদেন বন্ধ করতে। তখন আপনি শফিক সাহেবের নোডের অনুমতি ছাড়াও বন্ধ করতে পারবেন। তবে, সেক্ষেত্রে, আপনার যে বাকী বিটকয়েন রয়েছে সেটা পেতে কখনো ১৪৪ ব্লক বা তার বেশি সময়ও লাগতে পারে। এর কারণ, শফিক সাহেবের নোড অনলাইন না থাকার কারণে আপনার লাইটনিং নেটওয়ার্ক এ করা লেনদেনের তথ্য হালনাগাদ হবে না। যার কারণে, এইখানে একটা হি৯সেবের গরমিল হওয়ার সুযোগ থাকে।

আপনারা কি এখন বুঝতে পারছেন লাইটনিং নেটওয়ার্ক কি? যদি বুঝতে পারেন তাহলেই আমার লেখা সার্থক এবং অবশ্যই আপনার পরিচিতদেরকে আর্টিকেল শেয়ার করবেন।

ট্রেন্ডিং পোস্ট

Copyright 2021-23. All rights reserved © coinalap.com

আমাদের সংবাদ সবার আগে পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন।