ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা যেন থামছেই না। মার্কেটের উত্থানপতনের বাইরেও চলছে বিটকয়েন নিয়ে তোড়জোড়। খবরে এসেছে ৩.৬ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের চোরাই বিটকয়েন জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। তার সাথে সাথে অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন দু’জন। জানা গেছে তারা দুজন স্বামী-স্ত্রী। স্বামী ইলইয়া লিচ্যানস্টেন ও তার স্ত্রী হিদার মর্গান।
এই দম্পতির কাছ থেকে মঙ্গলবার প্রায় এক লাখ বিশ হাজার বিটকয়েন উদ্ধার করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। বিবিসি জানিয়েছে, বিটকয়েনগুলো একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করা হয়েছিল ২০১৬ সালে। সে সময় ওই এক লাখ বিশ হাজার বিটকয়েনের বাজার মূল্য ছিল সাত কোটি দশ লাখ ডলার।
তারা দুজন রাশিয়ান বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক বলেও এক খবরে প্রকাশ করা হয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বিটফিনেক্স ২০১৬ সালে হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছিল । ওই ঘটনাতেই প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ওই বিপুল পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরির ঘটনা ঘটে।
পরের বছরগুলোতে জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বিটকয়েনের দামও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। সেই সাত কোটি দশ লাখ ডলারের বিটকয়েনের বাজারমূল্য এখন ৩.৬ বিলিয়ন ডলার। মার্কিন বিচার বিভাগের ইতিহাসে এইটিই সবচেয়ে বড় অঙ্কের অর্থ উদ্ধারের ঘটনা।
রেকর্ড পরিমাণ চোরাই বিটকয়েন জব্দ ও সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করতে ওয়াশিংটন ডিসি, নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, এবং জার্মানির আনশবাখের তদন্তকারীরা সম্মিলিতভাবে কাজ করেছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, আলফা-বে অভিযান থেকে গ্রেপ্তারকৃত লিচ্যানস্টেন এবং তার স্ত্রী মর্গানের বিরুদ্ধে আদালতে অর্থ পাচার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হবে। দোষী প্রমাণিত হলে ২৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে এই দম্পতির।
২০১৭ সালে মার্কিন তদন্তকারীরা বেআইনী লেনদেনের অভিযোগে আলফা-বে নামে একটি ওয়েবসাইট ক্র্যাশ করে। ‘ডার্কওয়েবের ইবে’ নামে পরিচিত সাইটটির লেনদেন তালিকা হস্তগত হওয়ার পর তদন্তকারীরা আবিষ্কার করেন বিটফিনেক্স হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি যাওয়া বিটকয়েনের একটি অংশ বিনিয়োগ হয়েছে সাইটটিতে। সে সময়ই আলফা-বে’র সঙ্গে লিচ্যানস্টেনের অ্যাকাউন্টের লেনদেন নজরে আসে তদন্তকারীদের।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিটফিনেক্স কম্পিউটার সিস্টেম অনুপ্রবেশ করে এক হ্যাকার অন্তত দুই হাজার অবৈধ লেনদেন করেন, তারপর অর্থ পাচার করেন নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা লিচ্যানস্টেইনের একটি ডিজিটাল ওয়ালেটে।
লিচ্যানস্টেন-মর্গান দম্পতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বলছে, গেল পাঁচ বছরে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ২৫ হাজার চোরাই বিটকয়েন পাচার করেছেন তারা দু’জন। অভিযোগে আরো জানানো হয়েছে, অর্থ পাচারে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে নানা পন্থা অবলম্বন করেছেন তারা; কখনো ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করেছেন, কখনো বা ভিন্ন কোনো ক্রিপ্টো মুদ্রায় পাল্টে নেওয়া হয়েছে চোরাই বিটকয়েন।
একাধিক ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে অর্থ পাচারের চেষ্টা করেছেন এই দম্পতি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লেনদেনগুলোকে কখনো কখনো মর্গানের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধের মাধ্যম হিসেবেও চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
সাইবার অপরাধ থেকে বাঁচার বিভিন্ন পন্থা জানাতেন লিচ্যানস্টেন
মর্গান পেশায় একজন র্যাপ সংগীত শিল্পী। তার পাশাপাশি ছবি আঁকা, ফ্যাশন ডিজাইনিং এমনকি লেখালেখির জগতেও নিজেকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন তিনি।
মজার ব্যাপার হলো, মর্গানের সাম্প্রতিক লেখাগুলোর একটির শিরোনাম ছিলো “সাইবার অপরাধীদের কাছ থেকে আপনার ব্যবসাকে বাঁচানোর টিপস’’। ওই লেখার জন্য এক ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্রধানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি, যার শীর্ষক ছিল সাইবার জালিয়াতি ঠেকানোর সম্ভাব্য উপায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের অধীনে “ন্যাশনাল ক্রিপ্টোকারেন্সি এনফোর্সমেন্ট টিম’ গঠনের চার মাসের মাথায় এই ডিজিটাল সম্পদ জব্দ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটলো। গত বছরেও ২৩ লাখ ডলারের ক্রিপ্টোকারেন্সি জব্দ করেছিল দলটি।
এক ব্রিফিং-এ হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া প্রতিষ্ঠান বিটফিনেক্স জানিয়েছে, পুরো তদন্তেই তারা যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছে এবং চুরি হওয়া বিটকয়েনগুলো উদ্ধার হওয়ায় তারা খুশি।