ড. ক্রেইগ স্টিভেন রাইট নিজেকে অনেকদিন সাতোশি নাকামোতো বলে দাবী করে আসছেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি বিটকয়েন ব্লকচেইনের কপিরাইট মালিকানা দাবী করেন। এইরকম একটি দাবীর প্রেক্ষিতে করা মামলায়, ইংল্যান্ডের একটি কোর্টে হেরে যান ড. ক্রেইগ স্টিভেন রাইট।
নিজেকে সাতোশি নাকামোতো বলে পরিচয় দেয়া মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। এদের মধ্যে ডরিয়ান নাকামোতো, নিক জাবো এবং ক্রেইগের নামই বারবার উঠে এসেছে। যদিও ডরিয়ান নাকামোতো প্রথমে নিজেকে সাতোশি নাকামোতো দাবী করলেও পরে বলেন তিনি সাতোশি নাকামোতো নন। এর মধ্যে সাতোশি নাকামোতো পিটুপি ফাউন্ডেশন ওয়েবসাইটে পোস্ট করে জানান তিনি ডরিয়ান নাকামতো নন। আর নিক জাবো নিজেকে সাতোশি নাকামোতো বলে দাবী করেন নি। তার পুর্ববর্তী ইতিহাস, রিসার্চ অনুযায়ী মানুষ তাকে সাতোশি নাকামোতো ভাবছেন। আর একজন হলেন ড. ক্রেইগ স্টিভেন রাইট।
অনেকদিন ধরেই ক্রেইগ নিজেকে বিটকয়েন এর প্রতিষ্ঠাতা বলে পরিচয় দিচ্ছেন। তার ভাষ্যমতে, তিনি বিটকয়েন এর প্রতিষ্ঠাতা এবং বিটকয়েন এর হোয়াইট পেপার “এ পিয়ার টু পিয়ার ইলেকট্রনিক ক্যাশ সিস্টেম”, যাতে বিটকয়েন এর বিস্তারিত লেখা রয়েছে, তিনিই লিখেছেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ৩১শে অক্টোবর তিনিই সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামে জনসাধারণের কাছে এই হোয়াইট পেপার প্রকাশ করেন।
এছাড়াও তিনি বলেন, তিনি ২০০৭ থেকে বিটকয়েন সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন, মানে টেস্ট করছেন। ২০০৯ এ, #০ বা বিটকয়েন এর প্রথম ব্লক যাকে জেনেসিস ব্লক বলা হয়, তিনিই মাইন করেন যাতে কিছু তথ্য লেখা ছিল “The Times 03/Jan/2009 Chancellor on brink of second bailout for banks.” এইটা দ্য টাইমস পত্রিকার একটি শিরোনাম। জেনেসিস ব্লকে প্রকৃত বিটকয়েন এর প্রতিষ্ঠাতা এইটা সংযোজন করেন। ক্রেইগ বলছেন তিনিই এইসব যুক্ত করেছিলেন কারন তিনিই সাতোশি নাকামোতো।
ক্রেইগ আরও যুক্ত করেন, তার অনুমতি ছাড়াই বিটকয়েন ক্যাশ, বিটকয়েন এস ভি বিটকয়েন এর মুল কোডকে সংযোজন করেছেন। তিনি দাবী করেন, যেহেতু তিনি বিটকয়েন এর কোডবেজ, ব্লকচেইনের কপিরাইট এর মালিক, তার সম্মতি ছাড়া কেউ এই কোডকে সংযোজন করতে পারে না।
উক্ত মামলায় তার এবং তার উকিল মাইকেল হিকসের দাবীকৃত সকল কপিরাইট লঙ্ঘনকে, অযৌক্তিক বলে শুনানী দেন জজ মেলর। কারন হিসেবে বলেন বিটকয়েন এর এইরকম ফাইল কপিরাইট আইনের আওতায় পরে না। সোর্স
অবশ্য ক্রেইগ নিজে ছাড়াও আরও বেশকিছু মানুষ ক্রেইগকে সাতোশি নাকামোতো ভাবতেন। এর মধ্যে বিটকয়েন এর একজন ডেভেলপার গ্যাভিন এন্ডারসন ক্রেইগের সাথে অনেক মিশেছেন, অনেক কনফারেন্সে গিয়েছেন এবং বিটকয়েন নিয়ে অনেক আলোচনা করেছেন। ক্রেইগ তাকে বলেছেন তিনিই সাতোশি নাকামোতো। গ্যাভিন এন্ডারসন সেটা বিশ্বাস করেছেন এবং একটি ব্লগে সেগুলো প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি তার সে ব্লগ পুনরায় সংযোজন করেন এবং বলেন, “ক্রেইগকে বিশ্বাস করে আমি ভুল করেছি।” দেরীতে হলেও তিনি সত্যের সন্ধান পেয়েছেন।
ক্রেইগ কি বিটকয়েন এর প্রতিষ্ঠাতা সাতোশি নাকামোতো?
বিটকয়েন এর প্রতিষ্ঠাতা সাতোশি নাকামোতো কে এইটা প্রমানের জন্য খুব বেশি কিছু করা লাগে না। ক্রেইগ নিজে অনেক প্রমান উপস্থাপন করেছেন কিন্তু যেসব প্রমান করলেই নিমেষেই বলে দেয়া যায় তিনিই সাতোশি নাকামোতো, সেসবের পথে হাটছেন না তিনি। অনেক আগের একটি মামলায় তিনি কিছু বিটকয়েন এড্রেসের মালিক বলে উল্লেখ করেন। আসলে ওইগুলো সাতোশি নাকামোতো যখন প্রথম দিকে মাইনিং করেছিলেন তখনকার সময়ের। ক্রেইগ নিজেকে বিটকয়েনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে প্রমান করার জন্য ওইসব এড্রেস থেকে একটি ব্যবহার করে একটা বার্তা ডিজিটালভাবে সিগ্নেচার করলেই হয়। কিন্তু সে পথে হাটছেন না ক্রেইগ। কেন? কারন সে বিটকয়েন এর প্রতিষ্ঠাতা নয়। যদি হত, তাহলে তার বিটকয়েন ওয়ালেট এ থাকা সে এড্রেসের প্রাইভেট কী থাকত এবং ডিজিটালভাবে একটি বার্তা সে সিগ্নেচার করে প্রমান করতে পারত সে সাতোশি নাকামোতো।