ব্যবহারিক জ্ঞান না থাকলে সে বিষয়ে জানার জন্য বই সবচেয়ে চমৎকার মাধ্যম। অজানাকে জানতে আর সে জানাকে প্রয়োগ করতে বইয়ের জুড়ি নেই। প্রযুক্তির এই আধিপত্যের যুগেও বইয়ের চাহিদা বলার মতো। তাই, আজকে আমরা ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন নিয়ে লেখা ৫টি বই সম্পর্কে জানবো যেটা আপনাকে ক্রিপ্টো ও ব্লকচেইনের দুনিয়া সম্পর্কে জানতে ও এগিয়ে থাকতে সাহায্য করবে। উল্লেখ্য, ক্রিপ্টো দুনিয়া ও ব্লকচেইন যেহেতু আমাদের দেশে মোটামুটি এখনো সর্বসাধারণের জন্য নতুন আইডিয়া এবং এখনো সর্বক্ষেত্রে কোন অজানা কারণে এর যতটুকু প্রসার ঘটার কথা ছিলো তার পুরোটা এখনো ঘটেনি সেহেতু বাংলা ভাষায় ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন নিয়ে লেখা কোন বই নিয়ে সেভাবে আলোচনা করা হয়নি। উল্লিখিত ৫টি বইয়ের সবগুলোই ইংরেজি ভাষায় লেখা।
১. The Basics of Bitcoins and Blockchains (Antony Lewis)
বইটির এন্টোনি লুইস বেশ চমৎকারভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির আদ্যোপান্ত নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন বেশ নিখুঁতভাবেই। তার পাশাপাশি পাঠকদের বুঝতে সাহায্য করেছেন কেন একবিংশ শতাব্দির এই যুগে বিটকয়েন এবং ক্রিপ্টো কেন এত মূল্যবান। অর্থের ইতিহাস এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা কোন পদ্ধতিতে কাজ করে তাও চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন এই লেখক।
এই বইতে বিটকয়েন এবং ব্লকচেইনের মূল বিষয়গুলি এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যা আপনার বেশ সহজভাবেই মাথায় গেঁথে যাবে। বইটিতে ব্লকচেইন কী, এটি কীভাবে কাজ করে এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ তা বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় ব্লকচেইন প্ল্যাটফর্ম, স্মার্ট কন্ট্রাক্ট এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার আগে বিবেচ্য বিষয়গুলো নিয়েও বেশ ভালোভাবে লেখা হয়েছে । এছাড়াও ক্রিপ্টো বিনিয়োগের ঝুঁকি, কীভাবে স্ক্যাম সনাক্ত করবেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ, ডিজিটাল ওয়ালেট এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ইনভেস্টমেন্ট রেগুলেশন সম্পর্কেও অনুচ্ছেদ আছে।
২. Bitcoin: Programming the Open Blockchain, 2nd Edition( Andreas M. Antonopoulo)
এই বইটি লেখার বিচারে খুবই প্রযুক্তিবান্ধব বই। বইটির লেখক Andreas Antonopoulos বিশ্বের শীর্ষ বিটকয়েন এবং ওপেন ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞদের একজন হিসেবে পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত। তিনি এই পর্যন্ত তিনটি বিটকয়েন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং বেশ কয়েকটি বিটকয়েন স্টার্টআপের উপদেষ্টা বোর্ডেও কাজ করে নিজের অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য রেখেছেন। বিটকয়েন মাস্টারিং বইটি নতুন ব্যবহারকারী, ট্রেডার এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য অবশ্য পাঠ্য বলা চলে। বইয়ের একটু অনুচ্ছেদে প্রকৌশলী, বিকাশকারী, সিস্টেম এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর সামঞ্জস্যপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন।
অ্যান্টোনোপোলোস বিটকয়েন ডিসেন্ট্রালাইজড নেটওয়ার্ক, পিয়ার-টু-পিয়ার আর্কিটেকচার, লেনদেনের জীবনচক্র এবং নিরাপত্তা নীতিগুলি সম্পর্কেও লিখেছেন।। তিনি কী(Key), এড্রেস এবং ওয়ালেট সম্পর্কে বেশ বিস্তারিত লিখেছেন এবং মূল প্রযুক্তিগত ধারণা ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি অনেক ইউজারদের এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করেছেন।
৩. Blockchain Basics: A Non-Technical Introduction in 25 Steps (Daniel Drescher)
প্রবীণ ব্যাংকিং পেশাজীবি ড্যানিয়েল ড্রেশার প্রোগ্রাম কোড, গাণিতিক সূত্র বা অন্যান্য অধিকতর কঠিন বিষয়ের দিকে না ঝুঁকে ২৫টি ধাপে তার নিজের ভাষায় ব্লকচেইন প্রযুক্তি বর্ণনা করতে চেষ্টা করেছেন এই বইতে৷
ড্রেশার ইলেকট্রনিক সিকিউরিটি ট্রেডিংয়ে মেশিন লার্নিং, বড় ডেটা এবং অটোমেশনের গুরুত্ব অনুভব করে তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
ক্রিপ্টোজগতের খুঁটিনাটি নিয়ে লেখা এই বইটি আর্থিক ব্যবস্থায় ব্লকচেইন টার্মগুলো নিয়ে বেশ বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে এই বইয়ে। কেন ব্লকচেইন প্রয়োজন এবং কোথায় এটি সমস্যার সমাধান করতে পারে সে সম্পর্কে পাঠকরা বেশ চমৎকার কিছু ধারণা পেতে পারেন। বইটির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হচ্ছে ব্লকচেইনের প্রযুক্তিগত দিক এবং ব্যবসাবান্ধব আলোচনায় এর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা।
৪. Bitcoin Billionaires (Ben Mezrich)
বিটকয়েন বিলিয়নিয়ার্স মূলত ক্যামেরন উইংকেলভস ও তার জমজ ভাই টাইলার উইংকেলভস মিলে মার্ক জুকারবার্গের সাথে ফেসবুক স্টক সেটেলমেন্ট এবং ক্রিপ্টো জগতে তাদের অবস্থান বাস্তবধর্মী গল্প নিয়ে লেখা হয়েছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি নামক একটি অভিনব নতুন আইডিয়া সম্পর্কে জানার আগে কীভাবে উইংকেলভস ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল সে সম্পর্কে ওয়ালেট এই গল্পটিকে অত্যন্ত চমৎকারভানে ফুটিয়ে তুলেছেন। নভেম্বর ২০১৭ সালের নভেম্বারের মধ্যে, উইংকেলভস ভাইয়েরা প্রথম বিটকয়েন বিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠে।
ক্রিপ্টোর প্রথম দিনগুলোতে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চাইলে এই বইটি আপনার জন্য মাস্ট রিড।
৫. The Truth Machine: The Blockchain and the Future of Everything by Michael Casey and Paul Vigna)
আমাদের লিস্টের শেষ বইটির লেখক মাইকেল কেসি এবং পল ভিগনা। লেখকরা লোকেদের ডেটা, সম্পদ এবং পরিচয়ের উপর ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করার জন্য ব্লকচেইনের সম্ভাবনা নিয়ে বেশ আলোচনা করেছেন।
কেসি এবং ভিগনা লিখেন “বড় ব্যাংকগুলো বড় এবং আরও বেশি আইসোলেটেড হয়ে গেছে। গোপনীয়তা সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেছেন এটা তো শুধুমাত্র পরবর্তী হ্যাক পর্যন্ত সুরক্ষিত। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আমাদের জীবনকে সহজ করতে এবং আমাদের অর্থনীতিকে আরও দক্ষতার সাথে হ্যান্ডেল করতে তোলার জন্য বহু আগে একবার ডিজাইন করা অনেক “লিগেসি সিস্টেম” শেষমেশ আর কাজ করে না। তবুও এই সমস্ত কিছু অতিক্রম করার উপায় বাতলে দিয়েছেন তারা। আমাদের অর্থনীতির বিশাল অংশে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম একটি নতুন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম: ব্লকচেইন। মূলত ব্লকচেইনের গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং আমরা এটা ছাড়া কতটা কম সুরক্ষিত সেটাই জানান দিয়ে গেছেন এই দুই লেখক।