প্রতি বছরের মে মাসের ২২ তারিখে বিটকয়েন সমর্থকগোষ্ঠী বিটকয়েন পিজা দিবস পালন করে থাকে। ২০২১ সালে আজকের দিনে পালিত হবে ১১তম বিটকয়েন পিজা দিবস।
২০১০ সালের মে মাসের ১৮ তারিখ। বিটকয়েনটক ফোরামের ১৪৩তম মেম্বার লাসজেলো হানইয়েয বিটকয়েনটক ফোরামে পোস্ট করলেন তিনি কতিপয় পিজা চান যার বিনিময়ে তিনি ১০০০০ বিটকয়েন দেবেন। প্রসঙ্গত, বিটকয়েন এর ইতিহাসে প্রকাশ্যে এখনো এমন কোন লেনদেন হয় নি যেটাতে মানুষ রিয়েল ওয়ার্ল্ড এর কিছু ক্রয় করেছে। হতে পারে অনলাইনে অনেকেই সার্ভিস ফি হিসেবে বিটকয়েন দিয়েছে কিংবা অনেকেই অনলাইনে অন্য কিছু ক্রয় করেছে। কিন্তু অফলাইনের দুনিয়ায় এখনো বিটকয়েনে কিছুই লেনদেন হয় নি। লাসজেলো বলেছিল, তার দুটো পিজা হলে ভালো হয় যেন সে কিছুটা পিজা পরেরদিন এর জন্য রেখে দিতে পারে। যাই হোক, সেদিন এমন কাউকে পাওয়া যায় নি যে ২টা পিজার বিনিময়ে ১০০০০ বিটকয়েন পেতে আগ্রহী ছিল। যদিও একজন জিজ্ঞেস করেছিল সে কোন দেশ থেকে। লাসজেলো তখন ফ্লোরিডায় থাকেন। তিনি এড্রেস পোস্ট করলেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মে মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত সে কোন পিজা পেল না। তখন লাসজেলো ফোরামে আবার পোস্ট করেন তার অফার করা বিটকয়েন কি ২টা পিজার জন্যে খুবই কম? যদিও তখন আরো কিছু মানুষ আগ্রহী ছিল, তারা ভিন্নদেশ থেকে হওয়ায় অর্ডার করতে পারে নি। তবে, ২২ তারিখে এসে লাসজেলো জানায় সে ২টা পিজা পেয়েছে। সে সময় ২টা পিজার দাম ছিল ২৫/৩০ ডলার, আর ১০০০০ বিটকয়েন এর দাম ছিল ৪১ ডলার। দামে কি, লাসজেলো যে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গেলেন। বিটকয়েন দিয়ে প্রকাশ্যে প্রথম কোন মালামাল ক্রয় করলেন তিনি। অবশ্য, ক্রয় করার চেয়েও যে কারনে এইটা ইতিহাস হল, সেটা হল ১০০০০ বিটকয়েন এর দাম।
সম্প্রতি বিটকয়েন সর্বোচ্চ ৬৪৮০০ ডলার পর্যন্ত উঠে। সে দিক থেকে হিসেব করলে ২টা পিজার দাম হল ৫৫০৮ কোটি টাকা৷ মানে প্রতিটা পিজার দাম ২৭৫৪ কোটি টাকা। কি? ভাবা যায়? এই ঘটনার পর থেকে যারা বিটকয়েনের সাথে পরিচিত কিংবা যারা বিটকয়েনকে সমর্থন করে, তারা প্রতি বছর মে মাসের ২২ তারিখ বিটকয়েন পিজা দিবস পালন করে থাকেন।
কে এই লাসজেলো
লাসজেলো একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার। বিটকয়েন মাইনিং যারা শুরুর দিকে করেছেন, তাদের মধ্যে লাসজেলো অন্যতম। এ ছাড়াও তার বড় পরিচয় তিনিই জিপিইউ মাইনিং এর প্রবর্তক। এ ছাড়াও লাসজেলো বিটকয়েনে অনেক অবদান রেখেছেন। তবে তার এইসব পরিচয় খুব কম মানুষই জানে৷ মানুষ তাকে তার বিটকয়েন লেনদেনের জন্যই খুব ভালো ভাবে চেনে। কিছুদিন আগে কয়েনডেস্ক লাসজেলোর একটি সাক্ষাতকার নেন এবং তিনি জানান তিনি মোটেও তার এই লেনদেনের জন্য অনুতপ্ত নন। তিনি খুশি যে তিনি বিটকয়েন ব্যবহার করে কিছু ক্রয় করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, ” এইটা (বিটকয়েন) অনেক ভালো সিস্টেম, কিন্তু কেউ ওইটা ব্যবহার করছিল না। যদি কেউ ব্যবহার না করে, তাহলে আমার কাছে সব থাকলেও কি হবে?” লাসজেলোই সর্বপ্রথম জিপিইউ মাইনিং এর জন্য প্রোগ্রাম লিখেন। তখন সবাই সিপিইউ মাইনিং করত। লাসজেলো তার প্রোগ্রাম সবার সাথে শেয়ার করেন এবং জিপিইউ দিয়ে মাইনিংকে আরো এগিয়ে নিয়ে যান।
পিজা বিক্রেতা জারকস
লাসজেলোর কাছে যে ব্যক্তি পিজা বিক্রি করেছিলেন তার নাম জেরেমি (জারকস)। জারকস কোন পিজার দোকানদার ছিলেন না। তিনি মুলত দোকান থেকে ক্রয় করে লাসজেলোর জন্য পাঠিয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে জারকস বলেন, “বিটকয়েন যেহেতু একটা কারেন্সি, এইটা খরচ করতেই হবে। আমি ওই বিটকয়েনগুলো ৪০০ ডলারে বিক্রি করেছিলাম, প্রায় আমার পিজা বিক্রির দাম থেকে ১০ গুন। কারেন্সি ট্রেড করে ১০ গুন পাওয়া অনেক বেশি।”
EYNCE
May 24, 2021 at 1:02 am
এটি আসলেই অনেক আনন্দদায়ক মুহূর্ত ছিলো।