Connect with us

অল্টকয়েন

বিটকয়েন থেকে যেভাবে জন্ম হল বিটকয়েন ক্যাশ

Published

on

বিটকয়েন বনাম বিটকয়েন ক্যাশ

সাতোশি নাকামোতো ২০০৯ সালে বিটকয়েন এর জেনেসিস ব্লক বা প্রথম ব্লক (#০ নাম্বার ব্লক) মাইনিং করেন। তারপর থেকে বিটকয়েন চলছে এখন অবধি। মার্কেটক্যাপ বলুন আর ব্যবহার বলুন, সব দিক থেকেই প্রথম অবস্থানে রয়েছে বিটকয়েন, এ কথা সবার জানা। বিটকয়েন ক্যাশ এর জন্ম কিংবা সূত্রপাত কিভাবে হল সে কথা জানতে হলে প্রথমেই আমাদের জেনে নিতে হবে বিটকয়েন এর ইতিহাস। যেহেতু, এই আর্টিকেল এর মূল উদ্দেশ্য বিটকয়েন ক্যাশ নিয়ে কথা বলা, আমি বিটকয়েন এর ইতিহাস নিয়ে বিশদ বর্ণনায় যাবো না। শুধুমাত্র যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু নিয়েই আলোচনা করবো।

বিটকয়েন লোগো বনাম বিটকয়েন ক্যাশ লোগো
বিটকয়েন লোগো বনাম বিটকয়েন ক্যাশ লোগো

বিটকয়েন কে সৃষ্টি করেছে কিংবা কখন সৃষ্টি করেছে আমাদের বেশিরভাগ মানুষই জানেন। সাতোশি নাকামোতো বিটকয়েন এর শুরুতে এর প্রতিটা ব্লক সাইজ ১ মেগাবাইট তথ্য ধারণ ক্ষমতা দেন। এর মানে একটি ব্লকে লেনদেনের তথ্য আমরা সর্বোচ্চ ১ মেগাবাইট রাখতে পারবো। আর প্রতিটি ব্লকের গড় সময় ১০ মিনিট, মানে গড়ে প্রতি ১০ মিনিট পরপর একটি করে নতুন ব্লক যোগ হবে।

ব্লক সাইজ ১ মেগাবাইট এবং ব্লক টাইম গড়ে ১০ মিনিট হওয়ার কারনে আমরা প্রতিনিয়ত কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। যেমন- যখন একসাথে অনেক মানুষ বিটকয়েন এ লেনদেন করতে যাবে তখন আমাদের অনেক বেশি ফি দিতে হবে। আবার চাইলেই সবাই একসাথে তাদের সব লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবে না। কারণ, একটি ব্লকে আমরা ১ মেগাবাইট এর বেশি তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবো না, আবার সাথে আছে ব্লক টাইমের সীমাবদ্ধতা। যার ফলস্বরুপ, বিটকয়েন গড়ে প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ৭ টি লেনদেন প্রসেস করতে পারে যেখানে একটি ভিসা কার্ড প্রতি সেকেন্ডে ২৪ হাজার লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে। এটি আসলে অনেক বড় সমস্যা। সাতোশি কি এই বিষয়ে জানতেন না? চাইলেই তো তিনি বিটকয়েন এর ব্লক সাইজ আরো অনেক বড় করতে পারতেন এবং ব্লক টাইম আরো কমিয়ে আনতে পারতেন। তাহলে কেন সাতোশি নাকামোতো সেটা করেন নি?

বিটকয়েন যখন প্রথম শুরু হয় তখন কিন্তু বিটকয়েন ব্লক সাইজের কোন সীমাবদ্ধতা ছিল না। প্রায় ১ বছর পরে সাতোশি নাকামোতো প্রতিটা ব্লক এর সাইজ ১ মেগাবাইট করে দেন। আমরা জানি কোন মাইনার একটি ব্লক মাইন করলে সেটা অন্যান্য মাইনার তথা নোড সেই ব্লকের সত্যতা যাচাই করে। যদি ব্লক সাইজের কোন সীমাবদ্ধতা না থাকে, তাহলে এমন হতে পারে যে কোন মাইনার অনেক বড় একটি ব্লক মাইন করল যা অন্য কোন নোড তার নিজের সীমাবদ্ধতার জন্য ভেরিফাই করতে পারছে না। সেদিক চিন্তা করেই সাতোশি নাকামোতো ব্লক সাইজ ১ মেগাবাইট করে দিয়েছেন। এছাড়াও, যদি কোন মাইনার একটি বড় ব্লক মাইনিং করে যা অন্য কোন নোড তার নিজের সীমাবদ্ধতার জন্য গ্রহণ বা যাচাই করতে পারছে না, তখন যে যাচাই করতে পারছে না সে অন্য নতুন একটি চেইনে চলে যাবে। মানে সে আর বিটকয়েন ব্লকচেইনে থাকবে না। এই জন্যই সাতোশি নাকামোতো ভেবেচিন্তে ব্লক সাইজ ১ মেগাবাইট দিয়েছেন।

এ তো গেল ব্লক সাইজের কথা। তাহলে ব্লক টাইম কেন ১০ মিনিট করে দেয়া হল? সাতোশি কি পারতেন না ব্লক টাইম আর কমিয়ে দিতে যাতে, বিটকয়েন প্রতি সেকেন্ডে আরো বেশি লেনদেন সম্পন্ন করতে পারতো? সাতোশি কি এই ব্যাপারে অবগত ছিলেন না? সাতোশি অবশ্যই জানতেন। তবে, ব্লক টাইম কেন ১০ মিনিট দিয়েছেন সেটারও রয়েছে যৌক্তিকতা। একটি ব্লক যখন ৫০% এর বেশি মাইনার সঠিক বলে যাচাই করে কেবল তখনই সেটা গ্রহণযোগ্য হয়। অন্যথায়, সে ব্লকটিকে বাতিল করা সম্ভব। যদি ব্লক টাইম ১ মিনিট দেয়া হত তাহলে এমনও হতে পারতো যে অনেকেই নতুন মাইনিং করা ব্লকগুলো তাদের নোডে যাচাই করার আগেই আরো নতুন ব্লক সৃষ্টি হচ্ছে। যদি এমন হয়ে যায় যে একটি ব্লক ৫০% এর কম নোড সঠিক বলে যাচাই করেছে। ধরে নিলাম ৪৯% নোড সঠিক হিসেবে উক্ত ব্লক যাচাই করেছে। এরপর আরো একটি ব্লক মাইনিং হল। তখন আগের ব্লক যে ৫১% মানুষ যাচাই করে নি তারা যদি বলে আগের ব্লক সঠিক নয়, তাহলে আগের ব্লকটি আর ভ্যালিড থাকে না। তখন একটা ঝামেলা সৃষ্টি হবে কারণ এরপর আরো একটি ব্লক মাইনিং হয়ে গেছে। তাই সাতোশি নাকামোতো ব্লক টাইমে একটা গ্যাপ রেখেছেন যাতে এইরকম ঝামেলা সৃষ্টি না হয়।

কিন্তু কাজের কাজ তো কিছুই হচ্ছে না। আমরা সকলেই সবকিছু জানি কিংবা বুঝি, কিন্তু একথাও মিথ্যা নয় যে বিটকয়েন প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ৭ টি লেনদেন প্রসেস করতে পারে। তাহলে কিভাবে বিটকয়েন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হবে, দৈনন্দিন ব্যবহারের উপযুক্ত একটা মুদ্রা হবে? প্রতিনিয়ত বিটকয়েন এর বিভিন্ন ডেভেলপার চেষ্টা করছেন কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। তারই প্রেক্ষিতে, ২০১৫ সালে পিটার (Pieter Wuille) নামক একজন ডেভেলপার সেগউইট (Segwit) এর প্রস্তাবনা দেয়। সেগউইট মূলত স্ক্রিপ্টসিগ ব্যবহারের মাধ্যমে একটি ট্রাঞ্জেকশন সাইজকে কমিয়ে ফেলে। এতে করে আগের তুলনায় একটি ব্লকে বেশি ট্রাঞ্জেকশনের তথ্য রাখা সম্ভব। অনেকেই এই প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে গেলেও বেশিরভাগ মানুষই এই প্রস্তাবনা সমর্থন করেন। আমরা আগে পড়েছি যে যদি কেউ তাদের নোড আপডেট না রাখে, তাহলে সে ভিন্ন ব্লকচেইনে চলে যাবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। যেহেতু অনেক মানুষ পিটারের সেগউইট প্রস্তাবনাকে সমর্থন করে, ২০১৭ সালের ২১শে জুলাই, ৪৭৭১২০ নাম্বার ব্লক থেকে হার্ডফোর্কের মাধ্যমে বিটকয়েন ব্লকচেইনে সেগউইট যুক্ত হয়।

বিটকয়েন ক্যাশ এর জন্ম

কিন্তু অনেকেই ছিল সেগউইট প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে। তারা এই প্রস্তাবনা গ্রহণ করে নি। যারা এই প্রস্তাবনা সমর্থন করেন নি তারা পরবর্তীতে একটি নতুন ব্লকচেইনের চিন্তা করে। এরই প্রেক্ষিতে, ৪৭৮৫৫৮ নাম্বার ব্লক থেকে একটি হার্ডফোর্কের মাধ্যমে নতুন ব্লকচেইন তৈরী করে যেখানে সেগউইট ছিল না। তবে, তারা আগের সমস্যা সমাধানে বিটকয়েন এর ব্লক সাইজ বৃদ্ধি করে ১ মেগাবাইট থেকে ৮ মেগাবাইটে নিয়ে যায়। অর্থাৎ তারা সাতোশি নাকামোতোর যে লিগ্যাসি ছিল সেটা থেকে সরে আসে। জন্ম হয় নতুন চেইনের, বিটকয়েন ক্যাশ। এইখানে জেনে রাখা ভালো, ৪৭৮৫৫৮ নাম্বার ব্লকে যার কাছে যত বিটকয়েন ছিল সে তত বিটকয়েন ক্যাশ পেয়েছিল।

বিটকয়েন ক্যাশ এর মুখপাত্রদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিলেন রজার ভার। রজার ভার বিটকয়েন এর একবারে প্রথম দিকের ব্যবহারকারী ছিলেন। তিনি memorydealers.com ওয়েবসাইটের মালিক ছিলেন। বিটকয়েন এর বিনিময়ে যারা পণ্য বিক্রয় করা শুরু করেছিল প্রথমদিকে, রজার ভার তাদের মধ্যে অন্যতম। বিটকয়েন কম্যুনিটিতে রজার ভারকে “বিটকয়েন জিসু” বলা হত। সে যাই হোক, সেগউইট নিয়ে সে বিটকয়েন থেকে সরে আসলেও, সমর্থন দিয়েছিল সাতোশির লিগ্যাসির বিপক্ষে যাওয়া নতুন চেইন বিটকয়েন ক্যাশকে। সে বিভিন্নভাবে চেয়েছিল বিটকয়েন ক্যাশকে আসল বিটকয়েন হিসেবে পরিচিত করতে। এমনকি বিটকয়েন.কম ওয়েবসাইট তার নিয়ন্ত্রণে থাকায় মানুষকে আসল বিটকয়েন বলে বিটকয়েন ক্যাশ বিক্রয় করেছিল রজার ভার। দাম যদিও বিটকয়েন ক্যাশের নিত, সে বিটকয়েন ক্যাশকে আসল বিটকয়েন বলত। আসলে সে যারা নতুন তাদেরকে ধোঁকা দিত।

বিটকয়েন বনাম বিটকয়েন ক্যাশ

যেহেতু বিটকয়েন ক্যাশ এর জন্ম বিটকয়েন থেকে, দুইটার মধ্যেই অনেক মিল রয়েছে। দুইটার সরবরাহ ২১ মিলিয়ন। তবে, পার্থক্য হল বিটকয়েন এর ব্লক সাইজ ১ মেগাবাইট এবং সেখানে রয়েছে সেগউইট। পক্ষান্তরে, বিটকয়েন ক্যাশ এর ব্লক সাইজ ৮ মেগাবাইটে উন্নীত করা হয় যা এই চেইনকে আসলে ডিসেন্ট্রালাইজড চেইন হওয়া থেকে বাধা প্রদান করে। বিটকয়েন ক্যাশ বর্তমানে অনেকটা সেন্ট্রালাইজড বলা চলে। তার মোক্ষম উদাহরণ হল মাইনিং রিওয়ার্ডের উপর অনচেইন ট্যাক্স বসানো যা দিয়ে বিটকয়েন ক্যাশ এর উন্নয়ন করা হবে।

Continue Reading
Advertisement
Click to comment

মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ট্রেন্ডিং পোস্ট

Copyright 2021-23. All rights reserved © coinalap.com

আমাদের সংবাদ সবার আগে পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন।