২০২১ সালের নভেম্বরে বিটকয়েন এর দাম উঠে সর্বোচ্চ প্রায় ৬৯ হাজার ডলার। এরপর থেকে বিটকয়েন এর দাম ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। এক পর্যায়ে গত বছরের নভেম্বরে এসে সেটা প্রায় ১৫ হাজার ৫০০ ডলারে এসে ঠেকে। এরপর থেকেই সবাই অনুমান করার চেষ্টা করছে বিটকয়েনের দাম কি আরো কমবে নাকি আবার বৃদ্ধি পাবে। যদিও এইটা অনুমান করা খবুই মুশকিল। তবে, আমরা অতীতের বিভিন্ন রেকর্ড কিংবা অনচেইন এনালাইসিস করে বলতে পারি দাম বৃদ্ধি পাবে অথবা কমতে থাকবে আরো। সম্প্রতি, গত ১২ জানুয়ারী থেকে বিটকয়েন এর দাম আবার বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। যার কারণ হিসেবে অনেকেই ইউ এস এর সিপিআই এর কথা বলছেন আবার অনেকেই বলছেন বিটকয়েনের সর্বনিন্ম দাম আমরা গত নভেম্বরেই দেখে ফেলেছি। আমরা আজকে আলোচনা করার চেষ্টা করবো কেন বিটকয়েনের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে খুব শীঘ্রই এবং কেন এর দাম ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়ার আগে আবারও কমতে পারে।
কেন বিটকয়েন এর দাম বৃদ্ধি পেতে পারে?
অনেকেই ধারনা করছে বিয়ার মার্কেট শেষ এবং আমরা ইতিমধ্যেই বুল মার্কেটের প্রথম স্তরে আছি। নভেম্বরের ১৫ হাজার ৫০০ ডলারে নেমে যাওয়াকেই অনেকে বলছেন পরবর্তী বুল চক্রের সর্বনিন্ম দাম। তবে কি তাহলে আমরা বুল মার্কেটে প্রবেশ করেছি? চলুন দেখে নেয়া যাক, কেন কিছু মানুষ বলছে আমরা বুল মার্কেটে প্রবেশ করেছি।
বিটকয়েনের দাম সাধারনত একটি চার বছরের টাইম ফ্রেম বা চার বছরের ট্রেন্ড ফলো করে চলে। প্রতিটা হাভিং এরপর সাধারনত বিটকয়েন এর দাম বৃদ্ধি পেতে দেখা যায় এবং উক্ত বুল মার্কেটের সর্বোচ্চ দামে গিয়ে সেটা থামে। একটি হাভিং থেকে অন্য হাভিং পর্যন্ত বিটকয়েনের দাম সাধারনত তার পূর্ববর্তী বুল মার্কেটকে অনুসরণ করে থাকে।
হর্নহ্যারিস একজন ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট গবেষক। তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আমরা মার্কেটে একটি ট্রেন্ড দেখছি। বিটকয়েন তার সর্বনিন্ম দাম থেকে সর্বোচ্চ দামে যেতে সময় নেয় ১৫২ সপ্তাহ এবং সর্বোচ্চ দাম থেকে সর্বনিন্ম দামে যেতে সময় নেয় ৫২ সপ্তাহ। যদি আমরা মানি যে ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হয়, সে হিসেবে আমরা বলতে পারি ২০২১ সালে সর্বোচ্চ দাম থেকে ৫২ সপ্তাহের সময় ১৫হাজার ৫০০ ডলারে যাওয়াটাই সর্বনিন্ম এবং এর নিচে বিটকয়েনের দাম যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
এছাড়া ২০১৩ সালের বিয়ার মার্কেটও ৫৮ সপ্তাহ বিরাজমান ছিল যা অনেকটা উপরের হিসেবের কাছাকাছি।
একই প্যাটার্ন ২০১৯ সালেও দেখা গিয়েছিল যা ২০২১ এর বুলরানের শুরু ছিল। ২০১৯ এ বিটকয়েনের দাম সর্বনিন্ম ৩২০০ ডলারে নেমেছিল।
যদিও বলা যায় না কি হবে, মার্কেট যে সবসময় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে তাও না, তবু যদি হয় তাহলে আমরা ধরে নিতেই পারি আমরা বুল মার্কেটের শুরুর দিকে আছি যা হয়ত পরবর্তী হাভিং এরপর অর্থাৎ ২০২৪ এর পর শেষ হবে।
কেন বিটকয়েনের দাম আরো কমতে পারে?
উপরে আমরা একটা কারন দেখলাম যেখানে ধারনা করা যায় কেন বিটকয়েন এর দাম বনৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এইখানে আমরা বিটকয়েন এর দাম কেন কমতে পারে আরো সে বিষয়ে আলোচনা করব।
উপরে যা আলোচনা করেছি সেটা পজিটিভ দিকই বলছে কিন্তু আমরা যদি অনচেইন এর ছোট একটা কারন নিয়ে দেখি, তাহলে দেখবো দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
গত বুল রানের শুরুর দিকে আমরা দেখেছি বিটকয়েন হোয়্যাল, যারা ১০০০ বিটিসি হোল্ড করছিল তাদের এড্রেসে, তাদের আরো বিটকয়েন ক্রয় করতে দেখা গিয়েছিল। পক্ষান্তরে, বর্তমানে সেটার হার কমছে। হোয়্যালরা সেভাবে বিটকয়েন ক্রয় করছে না।
এছাড়াও, আমি সম্পুর্ন আমার ব্যক্তিগত একটা মতামত এইখানে তুলে ধরতে চাই। এইটা আমি দেখেছি গত বিয়ার মার্কেট এর শেষের দিকে। বিটকয়েনের দাম এখনো এতবেশি কমে নাই যে যারা গতবছর ক্রয় করেছে তারা বিক্রয় করছে। ২০১৯ সালে যখন বিটকয়েন ৩২০০ ডলারে নেমে আসে তখন চারদিকে ঝড় শুরু হয়েছিল। সবাই বিটকয়েন নিয়ে অনেক নেগেটিভ কথা বলেছে। বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী তাদের ক্ষতি আর নিতে পারছিল না এবং বাধ্য হয়ে বিক্রয় করে দিচ্ছিল। এইরকম পরিসস্থিকে বলে আত্নসমর্পণ (capitulation)। বিটকয়েনের দাম যখন এমন পর্যায়ে যাবে যখন বেশিরভাগ মানুষ এইতাকে স্ক্যাম বলবে, বিক্রি করে যা আছে তা সরিয়ে নিবে কেবল তখনই আমার মনে হয় বিয়ার মার্কেটের শেষ হবে। সে হিসেবে আমরা সাময়িক দাম বৃদ্ধি দেখলেও সেটা কিছুদিন পর নিন্মমুখীগতি হবে বলে ধারনা করতে পারি। সম্ভবত আগামী ২/৩ মাস পর আমরা আর একটা capitulation দেখবো যেখানে বিটকয়েন এর দাম ১০ হাজার ডলারের কাছাকাছি চলে আসবে কিংবা তারও কমে। হাস্যকর শুনতে হলেও অসম্ভব নয়।
আজকের মত বিটকয়েন এর দাম নিয়ে আলোচনা এইখানেই শেষ। আমাদের সব আলোচনা দ্রুত পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন- t.me/coinalapnews