Connect with us

ক্রিপ্টোকারেন্সি নিউজ

বাইন্যান্স, ফোর্বস, এফ.টি.এক্স ; ত্রিভূজ দ্বৈরথের সূচনা

Published

on

২০১৭ সালের জুলাই মাসে যাত্রা শুরু করা বাইন্যান্স এখন বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতের অন্যতম স্বনামধন্য এবং বড় এক্সচেঞ্জ। বাইন্যান্সের প্রতিষ্ঠাতা চাং পেং ঝাওকে বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রভাবশালী লোক হিসেবে ধরা হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ পছন্দের তালিকায় বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর কাছেই বাইন্যান্স প্রথম নাম। সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম ফোর্বস একটি সংবাদে বাইন্যান্সের কিছু সন্দেহজনক লেনদেনের কথা তুলে ধরে যা বাইন্যান্সের যে কোন ব্যবহারকারী কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে যারা জড়িত আছে তাদের ভাবিয়ে তুলতে পারে। কিছুদিন আগে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ এফ.টি.এক্স এর পতন হয়। এর মূল কারণ ছিল, তাদের অর্থের অব্যবস্থাপনা এবং পর্যাপ্ত লিকুইডিটির অভাব।

বাইন্যান্সের প্রেক্ষাপট

বর্তমানে মার্কেটে অনেক স্ট্যাবলকয়েন রয়েছে। যারা এই স্ট্যাবলকয়েন ইস্যু করছে তাদের বেশিরভাগই দাবী করে প্রতি ১ ডলার স্ট্যাবলকয়েন এর বিপরীতে তারা বাস্তবে ১ আমেরিকান ডলার সংরক্ষণ করছে। এর কারন, যদি কোন কারনে এই স্ট্যাবলকয়েন ১ ডলার দাম ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, তাহলে যেন তারা তাদের হোল্ডে থাকা আমেরিকান ডলার দিয়ে তাদের কাস্টোমারের দায় শোধ করতে পারে। এই দায় শোধ করার জন্য যে অর্থ হোল্ড করা হয়, তাকে বলা হয় কোলাটেরাল; আমরা এইখানে জামানত হিসেবে ব্যবহার করব।

বাইন্যান্স তাদের ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য, বাইন্যান্স চেইনে USDC ইস্যু করে যেটাকে বলা হয় BUSDC, এই টোকেন ইস্যু করার শর্ত হলো এর প্রতিটা টোকেনের বিপরীতে বাইন্যান্স ১ USDC সংরক্ষণ করবে বা জামানত হিসেবে রাখবে। BUSDC এর জন্য বাইন্যান্স যে জামানত রেখেছে, সেখান থেকে ২০২২ সালের শেষের দিকে ১.৮ বিলিয়ন ডলার চুপিসারে সরিয়ে নেয় যেটা এই টোকেনের ব্যবহারকারীরা কেউ জানেই না। যেহেতু, এইটা BUSDC এর জামানত মানে যারা BUSDC ব্যবহার করছে তাদেরই টাকা, সেহেতু বাইন্যান্স যদি এই জামানতের টাকা থেকে কোন টাকা সরাতে হয়, তাহলে সমপরিমাণ BUSDC বার্ন করতে হবে। বার্ন মানে হল কোন কয়েন সাপ্লাই থেকে চিরতরে ধ্বংস করা। বাইন্যান্স উক্ত ১.৮ বিলিয়ন ডলার কি কাজে ব্যয় করেছে কিংবা কোথায় ব্যয় করেছে তার কোন পর্যাপ্ত তথ্য কোথাও জানায় নি। যদিও কিছু সোর্স থেকে দেখা যায়, বাইন্যান্স এই অর্থ কিছু ট্রেডিং ফার্মকে দিয়েছিল। ট্রেডিং ফার্মগুলো হল এম্বার গ্রুপ, আলামেদা রিসার্চ, কাম্বারল্যান্ড। এছাড়া এই তালিকায় রয়েছে ট্রন প্রতিষ্ঠাতা জাস্টিন সান। তাদেরকে কেন এই অর্থ পাঠানো হয়, সে ব্যাপারেও কিছু জানায় নি বাইন্যান্স।

কয়েনবেস এর BUSD ডিলিস্ট

সম্প্রতি কয়েনবেস তাদের এক্সচেঞ্জ থেকে BUSD কে বাদ দিয়েছে। কারন হিসেবে তারা বলেছে BUSD তাদের এক্সচেঞ্জের মানদণ্ড অনুসরণ করছে না। তারা জানায়, “আমাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী BUSD আমাদের এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য যে মানদণ্ড থাকা দরকার সেটা অনুসরণ করছে না। উল্লেখ্য, কয়েনবেস ওয়ালেটে BUSD থাকবে এবং ব্যবহারকারীরা যে কোন সময় উইথড্র করতে পারবে।

তাহলে বাইন্যান্স কি এফ.টি.এক্সের পথেই হাঁটছে ?

বাইন্যান্স তাদের নিজের ঠিক করা নিয়মই ভাঙছে। প্রতিটা BUSDC ইস্যু করার জন্য বাইন্যান্স ১ USDC টোকেন হোল্ডে রাখার কথা বলেছে। এইখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো (অপ্রাসঙ্গিক, তবে জেনে রাখা ভালো), একটি টোকেনের জামানত হিসেবে তার অন্য একটি টোকেন হোল্ড করছে। এইটা কতটা রিস্কি সেটা একটু ভেবে দেখুন। যদিও USDC তাদের জামানত ঠিক রাখছে, তবু একটি টোকেনের জামানত হিসেবে অন্য টোকেন রাখার পক্ষে আমি নই।

যাই হোক, নিজেরা যে নিয়ম ঠিক করেছে সে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই গত বছরের ১৭ই আগস্ট তারা ৩.৬৩ বিলিয়ন ডলার উইথড্র করে BUSDC এর জামানত ওয়ালেট থেকে । এইখানে আমি আবারও বলছি, এই ৩.৬৩ বিলিয়ন ডলার কিন্তু BUSDC টোকেন এর জামানত ছিল। মানে এইখানে থেকে যদি ১ ডলার উইথড্র করতে হয়, তাহলে বাইন্যান্সকে অবশ্যই ১ BUSDC টোকেন বার্ন করতে হবে। অর্থাৎ, এই ৩.৬৩ বিলিয়ন ডলার উইথড্র করার জন্য বাইন্যান্স নিয়ম অনুযায়ী সমপরিমাণ BUSDC বার্ন করার কথা ছিল।

পরে, ৩.৬৩ বিলিয়ন ডলারের ১.৮৫ বিলিয়ন ডলার আবার BUSDC এর জামানত এড্রেসে ফেরত পাঠায় কিন্তু বাকিটা অন্য একটি এড্রেসে নিয়ে যায়। উক্ত এড্রেস থেকে ধারণা করা হচ্ছে এম্বার গ্রুপ, আলামেদা রিসার্চ, কাম্বারল্যান্ড এবং জাস্টিন সানকে বাইন্যান্স অর্থ পাঠিয়েছে।

উল্লেখ্য, যেখানে প্রতিটি BUSDC টোকেনের বিপরীতে ১ USDC জামানত রাখার কথা, বাইন্যান্স সেখানে দীর্ঘ ৪ মাস কোনরকম জামানত রাখেনি।

ফোর্বস বনাম বাইন্যান্স

যদিও ফোর্বস এইটা দাবী করেছে তাদের হাতে থাকা ব্লকচেইনের প্রমাণ অনুযায়ী, কিছু মানুষ মনে করছেন এইটা বাইন্যান্সের বিরুদ্ধে ফুড (FUD মানে কোন কিছু নিয়ে মানুষের মনে নেগেটিভিটি ছড়ানো, সহজ বাংলায় বিষ ছাড়ানো)। তাদের মতে, এফ.টি.এক্সের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ব্যাংকম্যান এর জন্য ফোর্বসের সহানুভূতি দেখায় কিন্তু চাং পেং এর ক্ষেত্রে কেন শুধুই নেগেটিভিটি?

উল্লেখ্য, আইনজীবি আইরিনা হেভার টুইটে বলেছিলেন ফোর্বস মিথ্যা এবং ভুল তথ্য দিয়ে থাকে। এছাড়া, ২০২০ সালে চাং পেং ঝাও ফোর্বসের নামে মানহানির মামলা করেছিলেন।

বাইন্যান্স প্রতিষ্ঠাতার টুইট

বাইন্যান্স প্রতিষ্ঠাতা চাং পেং ঝাও অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। বিভিন্ন ট্রেডিং ফার্মকে অর্থ পাঠানোর জবাবে তিনি বলছেন, “আমাদের এক্সচেঞ্জ থেকে যে কোন ব্যবহারকারী যে কোন সময় অর্থ উত্তোলন করতে পারে।” এছাড়াও তিনি জামানত প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের অর্থ সবসময় ১ঃ১ হিসেবে সংরক্ষণ করি।” যদিও এইসবের কোন নির্দিষ্ট প্রমাণ তিনি সংযুক্ত করেন নি। বাইন্যান্স এবং এফ.টি.এক্স কে একই সুতোয় না বাঁধার কথাও বলেছেন তিনি। তিনি বলেন বাইন্যান্স এবং এফ.টি.এক্স এক নয়।

Continue Reading
Advertisement
Click to comment

মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ট্রেন্ডিং পোস্ট

Copyright 2021-23. All rights reserved © coinalap.com

আমাদের সংবাদ সবার আগে পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন।