Connect with us

ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ

ফরসেজ কি(Forsage); ব্লকচেইনের আবরণে পঞ্জি স্কিম মডেল

Published

on

DeFi প্লাটফর্ম ফরসেজ এর চার রুশ প্রতিষ্ঠাতাকে ৩৪০ মিলিয়ন ডলার সমমুল্যের পঞ্জি স্কিম চালানোর অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিযুক্ত করা হয়েছে (Forsage হল ইথেরিয়াম ব্লকচেইনে তৈরি একটি ডিসেন্ট্রালাইজড এপ্লিকেশন (dApp) যা  ব্যবহারকারীদের মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রিপ্টো মার্কেটে অর্থ উপার্জন করতে সাহায্য করে)।

ফরসেজ

ডিসেন্ট্রালাইজড ফিন্যান্সকে সংক্ষেপে DeFi বলা হয়।এটি মূলত ব্লকচেইন নামের একটি স্বচ্ছ ও নিরাপদ টেকনোলজির মাধ্যমে পরিচালিত একটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বলতে পারেন, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মোটামুটি বিপরীত।

মূল ঘটনায় যাওয়ার আগে আমাদের ফরসেজ, পঞ্জি স্কিম কি এবং এটা পরিচালনার সাথে জড়িত হলে কেন কাউকে অভিযুক্ত করা হবে সে সম্পর্কে সামান্য ধারণা নেয়া প্রয়োজন। 

ফরসেজ (Forsage) কি? কিভাবে কাজ করে?

ফরসেজ (Forsage) মূলত  ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত বিজনেস মডেল। আপনি এটাকে ডিজিটাল মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বিজনেস আইডিয়া বলতে পারেন। আমাদের দেশে এরকম বিজনেস আইডিয়া অনেক দেখেছেন বলে ধারনা, যদিও সেগুলো অফলাইনে ছিল। আপনি কোন একটা পণ্য বা অর্থ দিয়ে কারো গ্রুপে জয়েন করবেন এবং এর বিনিময়ে যে আপনাকে জয়েন করাবে সে তার একটা কমিশন পাবে। একইভাবে, আপনিও যদি কাউকে করান আপনি একটা কমিশন হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি আয় করতে পারবেন। এভাবে একসময় বিশাল একটা “চেইন টিম” তৈরি হবে। এরকম মডেলের আদলে অনেক ব্যবসা আপনারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিগত দিনগুলোতে চোখে দেখেছেন। ফরসেজ অনেকাংশে সেরকম মডেল হলেও এর প্রসেস আর টেকনিক্যাল দিকগুলো সনাতনী পদ্ধতিতে চলে না। আধুনিক পদ্ধতিতে চললেও দেখতে বা শুনতে একইরকম লাগে বলে অনেকেই এটাকে বিতর্কিত স্কিম বা পঞ্জি স্কিম বলেই জানেন। পাশাপাশি এর পক্ষের লোকজন ও নেহায়েত কম নয়, সেটা যদিও তাদের বিনিয়োগ থাকার কারণেও হতে পারে। 

Lado Othok Icof নামে একজন রুশ নাগরিক “Forsage” তৈরি করেছিলেন। এই সার্ভিসটি ক্রিপ্টো থেকে লাভ করতে সাধারণদের সাহায্য করেছে দাবী তুলেছিলেন তিনি যদিও, এই সার্ভিসটি তার সূচনালগ্ন থেকেই কোনদিক থেকে অর্থবহ ছিল না।

এই প্রজেক্টটি ক্রিপ্টো পাওয়ার জন্য ইথেরিয়াম  নেটওয়ার্কে একটি “স্মার্ট কন্ট্রাক্ট” সিস্টেম ব্যবহার করে বানানো হয়েছে বলেও জানা যায়।

পঞ্জি স্কিমের সারাংশ

চা দোকানের আড্ডার ভাষায় যদি বলি পঞ্জি স্কিম কি তাহলে বলতে হবে “অতি স্বল্প সময়ে বিভিন্ন রকম শর্টকাট ব্যবহার করে কোন ব্যবসায়িক কাঠামো দাঁড় না করিয়ে অর্থনৈতিকভাবে আঙুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার বুদ্ধিকেই পঞ্জি স্কিম বলে”।

আপনারা সবাই মিশরের পিরামিড দেখেছেন। পিরামিডের আকৃতির সামনে দাঁড়ালে একটা ত্রিভুজাকৃতির প্যাটার্ন ভেসে উঠে আমাদের চোখে যা শীর্ষবিন্দু থেকে যতোই নীচের দিকে যায় ততোই সেটা বেশি জায়গা দখল করে এবং একদম বেস বা যেখানে ভূমির সাথে মিশে সেখানেই তার দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বড় হয়। পঞ্জি স্কিমের ডিজাইনও অনেকটাই সেরকম। এই স্কিমের শীর্ষবিন্দুতে থাকে মূল পরিকল্পনাকারীরা যারা এই স্কিম পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন। তাদের  নিচের দিকে যতো লোকজন এই স্কিমে যোগ দেন তাদেরকে বিভিন্নভাবেই আইডিয়া প্রজেক্ট করে উদ্বুদ্ধ করা হয় যাতে তিনি আরো অনেক লোক নিয়োগ করেন এবং নিয়োগ করার ক্ষেত্রে একটা দীর্ঘ বা স্বল্পমেয়াদী লাভও দেখানো হয়।

স্কিমের শুরুর দিকে কিছু শীর্ষস্থানীয় লোকজনকেও রোল মডেল হিসেবে দেখানো হয় যারা এই চেইন অনুসরণ করে বিশেষ করে অর্থনৈতিক ভাবে সফল হয়েছেন। এমনভাবে ডিজাইনটি সাজানো হয় যেখানে, একমাত্র লোকবল বাড়ালেই উপার্জন বা মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। মুনাফার তাড়নায় নিচের সারিগুলোতে লোকজন আরো কিছু লোকজন নিয়োগ করে এবং সেসব নিয়োগপ্রাপ্ত লোকজন একই পন্থায় আরো অনেক লোকজনদের নিয়োগ দেয় আর এভাবেই মোটামুটি একটা পিরামিড বা পঞ্জি স্কিম মডেল তৈরি হয়। তবে এসব স্কিমের ক্ষেত্রে যেটা বেশিরভাগই দেখা যায় তা হলো, শুরুর দিকের লোকজন ব্যতিরেকে বাকিরা মুনাফার দেখা পায়না এবং সর্বশেষ কাতারে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকজনেরা ক্ষতির মুখোমুখি হয় সবচেয়ে বেশি এবং সব মিলিয়ে একসময় সেটা অস্থিতিশীল মডেলে পরিণত হয়।

কিভাবে পঞ্জি নামটি এলো?

মূলত, চার্লস পঞ্জি নামের এক লোক ১৯২০ সালের দিকে ডাকবিভাগের কুপন ব্যবহার করে একটি স্কিম চালু করেছিলেন বোস্টন শহরে৷ পরে সে বৃহৎ স্বার্থে এটার সাথে বিভিন্ন এজেন্ট আর কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে এটাকে প্রতারণামূলক শিল্পে রুপ দেন। পরে তার নামানুসারেই এই ধরনের স্কিমের নাম রাখা হয় পঞ্জি স্কিম যেখানে কম বিনিয়োগের বিনিময়ে গ্রাহকদের স্বল্পসময়ে অধিক বা অস্বাভাবিক মুনাফা দেয়ার অফার দেয়া হয়।

ফরসেজ এর পঞ্জি স্কিম

এবার আসা যাক ফরসেজ এর পঞ্জি স্কিমের দিকে। মার্কিন বিচার বিভাগের জানায়, চারজন রুশ নাগরিকের বিরুদ্ধে পঞ্জি স্কিম পরিচালনায় অভিযুক্ত হয়েছেন। প্রতারণামূলক এই স্কিমটি ইথেরিয়াম, বাইন্যান্স স্মার্ট চেইন এবং ট্রন ব্লকচেইনে স্মার্ট কন্ট্রাক্টে (ব্লকচেইনে চলা একটি এপ যেটা ক্রিপ্টো লেনদেন করতে ব্যবহার হয়) যোগ করেছিল।

বিচার বিভাগ তাদের ওয়েবসাইটে, একটি বিবৃতিতে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, “উল্লিখিত অভিযোগে অভিযুক্ত আসামীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে ফরসেজকে একটি বৈধ এবং লাভজনক ব্যবসার সুযোগ হিসাবে ফলাওভাবে প্রচার করে আসছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, অভিযুক্তরা ফরসেজকে একটি পঞ্জি এবং পিরামিড বিনিয়োগ প্রকল্প হিসাবে পরিচালনা করে আসছিলো যা বিভিন্ন দেশে থাকা তাদের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৩৪০ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে। ফরসেজের চার রাশিয়ান প্রতিষ্ঠাতার নাম যথাক্রমে ভ্লাদিমির ওখোতনিকভ, ওলেনা ওব্লামস্কা, মিখাইল সের্গেভ এবং সের্গেই মাসলাকভ। তারা যদি প্রতারণার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয় তবে তাদের ২০ বছর পর্যন্ত কারাভোগ করতে হতে পারে। আদালতের নথিতে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ তাদের উদঘাটন করা ঘটনার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন।

তারা জানায় তদন্ত করতে গিয়ে “স্মার্ট কন্ট্রাক্ট” কোড পেয়েছেন যেটা বিনিয়োগ করা যেকোন অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। 

এই মামলাটি কতটুকু জটিল ছিলো সেটা বোঝাতে  মার্কিন বিচার বিভাগ অ্যাটর্নি নাটালি উইটকে বলেন, “এই কার্যক্রমটি আমাদের জন্য ছিলো একটি কঠিন যাত্রা। আমাদের কয়েক মাসের পরিশ্রমের ফল হিসেবে আমরা আলাদা আলাদা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ভিন্ন দেশের লোকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতেও আমাদের জটিল একটা প্রসেসের মধ্যে যেতে হয়েছে। কয়েকশো মিলিয়ন ডলারের এই জালিয়াতি করার জন্য নতুন প্রযুক্তির অসৎ ব্যবহার করে একটা উদীয়মান আর্থিক বাজারকে নষ্ট করার হাত থেকে বাঁচাতে এই কার্যক্রমের পেছনের অনেকের পরিশ্রম ও সমন্বয় করেছি আমরা।

ফরসেজ থেকে ইনকাম

ফরসেজ থেকে ইনকাম নিয়েও রয়েছে নানারকম অভিযোগ। Forsage (ফরসেজ) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা  তাদের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে “বৈধ, কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং লাভজনক বিনিয়োগের সুযোগ” হিসেবে প্রচার করে এটাকে লোভনীয় করার চেষ্টা করেছে কিন্তু এই অভিযোগের জবাবে তারা বলে যে, বিনিয়োগকারীদের ৫০ শতাংশের বেশি  তাদের বিনিয়োগের কোন রিটার্ন পান নি এবং যারা ফেরত পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি বিনিয়োগকারী “Forsage Ethereum” প্রোগ্রামে বিনিয়োগের চেয়ে কম ইথেরিয়াম (ETH) ফেরত পেয়েছে্ন।

ফরসেজ কি হালাল

ফরসেজ হালাল না কি হারাম এই নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে। যেহেতু ফরসেজ একটা স্ক্যাম প্রজেক্ট সেহেতু এইখানে হালাল কিংবা হারাম এইটা সম্পর্কে আলোচনারও বেশি কিছু নেই। যদিও আস্ক উম্মাহ নামক ওয়েবসাইটে কিছু ভুল আলোচনা রয়েছে, তাদের মতে এইটা হারাম। যাই হোক, এই কোম্পানি বা প্রজেক্ট সম্পর্কে আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনারা আশা করি এর আলোকে খুঁজে নিতে পারবেন এইটা আসলে হালাল নাকি হারাম।

ট্রেন্ডিং পোস্ট

Copyright 2021-23. All rights reserved © coinalap.com

আমাদের সংবাদ সবার আগে পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন।