একমাস আগে চায়নার ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষেধাজ্ঞার কারনে, হুউবি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ তাদের কার্যক্রমের বেশিরভাগ ইন্স্ট্রুমেন্ট দেশের বাইরে পাঠিয়েছে। বিশেষ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি-বান্ধব রাস্ট্র হিসেবে পরিচিত সিঙ্গাপুরকে তারা বেছে নিয়েছে বলে তাদের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক ওয়েবসাইট কয়েনডেস্ককে জানিয়েছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রাকডাউনের পর থেকেই দেশের বাইরে স্থানান্তরের চেষ্টা করে আসছিল। পরের মাসেই সিঙ্গাপুরে প্রাথমিকভাবে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালুর চেষ্টা করে। কিন্ত সিনিয়র কর্মকর্তাদের অনেকেই সেই বছর চীনেই কার্যক্রম চালোনোর প্রতি উৎসুক থাকে।
তখন থেকেই ব্যবসার উন্নয়ন ও বিপণনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ইন্স্ট্রুমেন্ট বিশেষ করে কম বিতর্কিত যন্ত্রাংশ দেশের বাইরে পাঠানো শুরু হয়। এর ফলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে চীনে হুউবি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ শুধুমাত্র প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যার সদরদপ্তর দেশের বাইরের এবং পরিচালিতও হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে। এর ফলে ভবিষ্যতের কোনো ক্রাকডাউন থেকে সুরক্ষা থাকা যাবে বলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান। গত শুক্রবার চায়নার সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা চীনে অবস্থানরত কর্মকর্তাদেরও চিন্তায় ফেলে দেয়।
দেশীয় কর্মী যারা বিদেশে ভার্চুয়াল মুদ্রা লেনদেনে জড়িত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আইনি ব্যক্তি, এবং যারা ভার্চুয়াল মুদ্রা লেনদেনের ব্যবসার সাথে জড়িত, যারা মার্কেটিং প্রোমোশন, সেটেলমেন্ট, টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে থাকে তাদেরকে দেশীয় আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান করা হবে। চারজন সাবেক ও একজন বর্তমান কর্মকর্তা যারা তাদের নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক শর্তে আরো বলেন, তারা কোম্পানির সাথে আপ-টু-ডেট রয়েছেন। বিভিন্ন তথ্য ও আপডেট কোম্পানিকে জানাচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, হুউবি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বিশ্বের অন্যতম একচেঞ্জ সাইট বিশেষ করে ট্রেডিং ভলিউম এর ক্ষেত্রে।
গত কয়েকমাস যাবত চীনা কর্তৃপক্ষ একচেঞ্জটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশঙ্কা থাকায় চীনে থাকা কর্মীরা শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। চীনে থাকা কর্মীদের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা স্থায়ী নাকি অস্থায়ী সেটি নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। প্রাক্তন কর্মীদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডু জূন বলেন, “বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানটির ব্যপ্তি বাড়ানোর জন্য এটি করা হচ্ছে। তাই বিদেশি নিয়োগগুলো সেভাবেই করা হচ্ছে। ‘হুউবির সম্প্রসারণ’ এর ব্যবহারকারীদের ব্যবসার ধারবাহিকতা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা প্রদান করবে।”
পিবিওসির শুক্রবার ঘোষণার পরে, একজন হুউবি প্রতিনিধি বলেছিলেন যে “কর্মীদের ছাঁটাই করার কোনও পরিকল্পনা নেই”, বিশ্বব্যাপী তাদের অফিসকাঠামো অনুসারে কর্মীদের বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তর প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে চীন ভূখণ্ডে খুব বেশি কর্মচারী নেই।”
২০১৭ সালে চীন ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ নিষিদ্ধ করে। এই নিষেধাজ্ঞার পর হুউবি, ওকেক্স এর মত অন্যান্য একচেঞ্জগুলো কাগজে কলমে দেশ থেকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে। তবে হুউবি শুধুমাত্র বেইজিং এ তাদের ট্রেডিং কার্যক্রম চালু রাখে চীনের ব্যবহারকারীদের জন্য যেখানে তাদের সিনিয়র কর্মকর্তারাই শুধু ছিলেন। সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার পর হুউবি স্বীকার করে চীনে অবস্থানরত তাদের কর্মকর্তা ও চীনা ব্যবহারকারীদের জন্য ট্রেডিং এর অনুমতির কথা। এরপর তাদের কান্ট্রি রিজন থেকে চীনকে বাদ দেয় ও চীনে যাবতীয় কার্যক্রম সমাপ্তির ঘোষনা দেয়।
হুউবি মে মাসে যখন তাদের কর্মীদের চীনের বাইরে বিভিন্ন দেশে স্থানান্তর করা শুরু করে, তখনও বিশ্বব্যাপী তাদের আকাঙ্ক্ষা পুরণ করার বিষয়টি অনেক দুর মনে হয়েছিল। চীনের বাইরের গ্রাহক তৈরীর ও সেবা দেওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে সম্পন্ন করার ফলে বর্তমানে অন্যতম সেরা ক্রিপ্টোকারেন্সি একচেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
শুরুর দিকে হুউবি বিশ্বব্যাপী প্রচুর স্থানীয় কর্মী নিয়োগ দেয় যারা ইংরেজিতে খুব দক্ষ ছিল না। ফলে গ্রাহক ও কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগে একধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও বিষয়টি পরে দ্রুততার সাথেই সমাধান করা হয়। বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধিও স্বীকার করেন। পাঁচটি মহাদেশের ১৪০ টির বেশি দেশে প্রায় ১০০০ এর অধিক কর্মচারী প্রতিষ্ঠানটির সাথে জড়িত। জাপান ও কোরিয়ার শাখাগুলো অধিক সাফল্য পেয়েছে তাদের ভাষাগত দক্ষতার জন্য ও তাদের সাথে চীনের যোগাযোগের সহজলভ্যতার জন্য।
চীনের একজন প্রাক্তন কর্মচারী বলেন, “ঐতিহ্য, স্থানীয়, ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারনে চীন থেকে হুউবি এর ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা কম।