ক্রিপ্টোকারেন্সির খুটিনাটি
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? কত প্রকার? কিভাবে কাজ করে?
Published
12 months agoon
By
adminক্রিপ্টোকারেন্সি বর্তমান দুনিয়ায় খুব দ্রুত আলোড়ন সৃষ্টি করা শব্দগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতোর বিটকয়েন দিয়ে বর্তমানের ব্লকচেইনভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সির যাত্রা শুরু। যদিও এর আগে অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রচলনের চেষ্টা করেছেন কিন্তু তারা সবাই একটি জায়গায় গিয়ে পিছু ফিরতে হয়েছে; বিশ্বাস। ক্রিপ্টোকারেন্সির ধারনা ১৯৮৯ সালে প্রথম শুরু হয়। কিন্তু ক্রিপ্টোগ্রাফির ব্যবহার করে কেউই ট্রাস্টলেস একটা ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরী করতে পারে নি। পরবর্তীতে সাতোশি নাকামোতো প্রুফ অব ওয়ার্কের মাধ্যমে ব্লকচেইনভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন নিয়ে আসেন যেটাতে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির হস্তক্ষেপ ছাড়াই লেনদেন করা যায়। মানে ডিসেন্ট্রালাইজড কারেন্সি, লেনদেনে প্রয়োজন নেই কোন তৃতীয় পক্ষের। বর্তমানে রয়েছে অগণিত ক্রিপ্টোকারেন্সি যদিও এর বেশিরভাগ ক্রিপ্টোকারেন্সি কোন কাজের নয় কিংবা কোন সমস্যার সমাধান করে না, যেমনটা বিটকয়েন করতে সক্ষম হয়েছিল।
ক্রিপ্টোকারেন্সি মানে কি
ক্রিপ্টোকারেন্সি মানে ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে তৈরিকৃত মুদ্রাকে বোঝানো হয়। ক্রিপ্টোগ্রাফির সাহায্যে, ব্লকচেইনের মাধ্যমে যেসব ডিজিটাল কারেন্সির লেনদেনের হিসাব নিকাশ কোন তৃতীয় পক্ষের সহায়তা ছাড়া একটি ডিসেন্ট্রালাইজড নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে পরিচালিত হয় সেগুলোই ক্রিপ্টোকারেন্সি। এই কারেন্সির সকল লেনদেনের তথ্য ব্লকচেইনে সংরক্ষিত হয়ে থাকে যার কারনে লেনদেনের তথ্য পরিবর্তন করা অসম্ভব। তবে, এইখানে জেনে রাখা ভালো যে, যেসব ক্রিপ্টোকারেন্সি ডিসেন্ট্রালাইজড কেবল সেগুলোই নিরাপদ। যেমন বিটকয়েনের লেনদেনের তথ্য কেউ চাইলেই পরিবর্তন করতে পারবে না কারণ এইটা ডিসেন্ট্রাকাইজড নেটওয়ার্ক। অন্য দিকে, আমরা যদি বর্তমান বিশ্বের ২য় সর্বোচ্চ মার্কেট ক্যাপিটাল অবস্থানে থাকা ইথেরিয়ামের কথা বলি, তাহলে জেনে অবাক হবেন যে ২০১৬ সালে ইথেরিয়ামে একটা হার্ডফর্কের মাধ্যমে কিছু ট্রাঞ্জেকশন রোলব্যাক করা হয়। এইটা নিয়ে বিস্তারিত অন্য একদিন লিখবো। কেউ আগ্রহী হলে কমেন্ট করা জানাবেন। এইটা খুব ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা। যাই হোক, ক্রিপ্টোকারেন্সি মানে কি সেটা আমরা যদি বলি তাহলে হবে ক্রিপ্টোগ্রাফির সাহায্যে যেসব কারেন্সি কোন তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে লেনদেন করা যায় সেটাই ক্রিপ্টোকারেন্সি।
ক্রিপ্টোকারেন্সি অর্থ কি?
ক্রিপ্টোকারেন্সি অর্থ গুপ্তমুদ্রা। এইটা আভিধানিক অর্থ বলতে পারেন। কিন্তু আমরা যদি ক্রিপ্টোকারেন্সির বাংলা অর্থ কি লেখা যায় সেটা বিবেচনা করি, তাহলে গুপ্তমুদ্রা এর সাথে যায়? অবশ্যই না। কেন যায় না সেটা আপনারা আমাদের Cryptocurrency meaning in Bengali আর্টিকেলে দেখে নিতে পারেন। ওইখানে আমরা এর বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যাই হোক, তাহলে আমরা আসলে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাংলা অর্থ কি ব্যবহার করতে পারি? গুপ্তমুদ্রা, ডিজিটাল মুদ্রা নাকি ক্রিপ্টোমুদ্রা? বেশিরভাগ মানুষ এই ৩টি অর্থ ব্যবহার করে থাকেন। সে দিক থেকে আমাদের কাছে ক্রিপ্টোমুদ্রা অর্থটাই বেশ গ্রহণযোগ্য মনে হয়। তবে, বাংলাতে ক্রিপ্টোকারেন্সির কোন অর্থ না করে যেভাবে আছে সেভাবে ব্যবহার করাটাই অধিক শ্রুতিমধুর। মানে, ক্রিপ্টোকারেন্সি অর্থ ক্রিপ্টোকারেন্সি। সকল বিদেশী শব্দের অর্থ হয় না। সেদিক থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি শব্দটাই আমাদের কাছে অত্যদিক গ্রহণযোগ্য এবং আমরা মনে করি এইটাই সবাই ব্যবহার করা উচিত।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কত প্রকার?
ক্রিপ্টোকারেন্সি কত প্রকার এই প্রশ্নটা অনেকটা অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। তবে যারা ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ করার চিন্তাভাবনা করছেন, তাদের অবশ্যই জানা উচিত ক্রিপ্টোকারেন্সি কত প্রকার এবং কোন ক্রিপ্টোকারেন্সির কি ব্যবহার। নিচে আমরা ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রকারভেদ নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো। ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রধানত দুই প্রকার বলা যায়।
- প্রুফ অব ওয়ার্ক (Proof of Work)
- প্রুফ অব স্টেক (Proof of Stake)
প্রুফ অব ওয়ার্ক (PoW)
যখন আমরা ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন করে থাকি, তখন একটা লেনদেনে অনেকগুলো তথ্য থাকে। বিটকয়েন একটি প্রুফ অব ওয়ার্ক ক্রিপ্টোকারেন্সি। যখন আমরা কাউকে বিটকয়েন পাঠাই, তখন আমরা একটা ট্রাঞ্জেকশন আইডি পেয়ে থাকি। এই ট্রাঞ্জেকশন আইডির মাধ্যমে যে কেউ ব্লকচেইন এক্সপ্লোরার এর সাহায্যে দেখতে পারে আপনি কোথায় বিটকয়েন পাঠিয়েছেন, কত বিটকয়েন পাঠিয়েছেন, কোন ইনপুট থেকে বিটকয়েন পাঠিয়েছেন কিংবা কখন পাঠিয়েছেন। এখন আপনি চাইলে একটা ফেইক কোড লিখে একটা ফেইক ট্রাঞ্জেকশন ক্রিয়েট করতে পারেন। কিংবা একটা ইনপুটকে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। যদিও থিওরিতে সম্ভব, বাস্তবে কিন্তু সম্ভব নয়। কারন, আমাদের লেনদেনের সকল তথ্য ভেরিফাই করে থাকে মাইনাররা। আমরা যেসব লেনদেন করে থাকি সেগুলো চেক করেই একজন মাইনার নতুন ব্লক খোজার কাজ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে, আমরা যদি ফেইক ট্রাঞ্জেকশন ক্রিয়েট করি, সেটার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। আবার যদি কোন মাইনার নিজেই ফেইক ট্রাঞ্জেকশন করতে চায়, সেটাও গ্রহণযোগ্য হবে না কারণ, বিটকয়েন নেটওয়ার্কে রয়েছে অসংখ্য নোড যেগুলো ফেইক ট্রাঞ্জেকশন এক্সেপ্ট করবে না। যাই হোক, এই যে মাইনার একটা ট্রাঞ্জেকশন এর তথ্য ভেরিফাই করছে, লেজারে হালনাগাদ করছে এইগুলোই হচ্ছে প্রুফ অব ওয়ার্ক।
প্রুফ অব স্টেক (PoS)
পক্ষান্তরে, প্রুফ অব স্টেকেও কিন্তু উপরের কাজগুলো হয়। মানে, আমাদের লেনদেন সত্য কি না, ফেইক ট্রাঞ্জেকশন করার চেষ্টা করছে কি না কেউ ইত্যাদি। এরপর নতুন ব্লকে আমাদের লেনদেন হালনাগাদ করা হয়। কিন্তু এইখানে নতুন ব্লক খুজে পাওয়ার জন্য ব্যবহার হয় প্রুফ অব স্টেকিং। মানে, আপনার ওয়ালেটে উক্ত কয়েন হোল্ড করা। যে যত বেশি কয়েন হোল্ড করবে এবং যার ইনপুট যত বেশি পুরনো, তারা এইখানে নতুন ব্লক পাবে। এই প্রক্রিয়াটাই প্রুফ অব স্টেক।
উপরে আমরা আলোচনা করে ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রধান দুই প্রকার নিয়ে। আবার ব্লকচেইনের ভিত্তিতে যদি আমরা চিন্তা করি, ক্রিপ্টোকারেন্সি আরো দুই প্রকার রয়েছে।
- কয়েন
- টোকেন
কয়েন
ক্রিপ্টোকারেন্সি কত প্রকার বললেই প্রথমে চলে আসে কয়েনের নাম। বিটকয়েন দিয়েই শুরু করা যাক। সাধারণভাবে বলতে গেলে যেসব কয়েনের রয়েছে নিজস্ব ব্লকচেইন সেগুলোকে আসলে কয়েন বলা হয়। যেমন, বিটকয়েনের রয়েছে নিজস্ব ব্লকচেইন যার কারনে বিটকয়েন একটি কয়েন। কিংবা ইথেরিয়ামের রয়েছে নিজস্ব ব্লকচেইন তাই আমরা ইথেরিয়ামকে কয়েন বলতে পারি।
টোকেন
পক্ষান্তরে, যেসব ক্রিপ্টোকারেন্সির নিজস্ব ব্লকচেইন নেই কিন্তু অন্য ব্লকচেইনের উপর নির্মিত হয়েছে, সেগুলোই টোকেন। যেমন, পাওয়ার লেজার ইথেরিয়ামের একটি টোকেন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে?
ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একটি ডিজিটাল কারেন্সি যা এনক্রিপশন ব্যবহার করে নিরাপদ এবং নিশ্চিত লেনদেন পরিচালনা করে। এটি কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, বরং এটি একটি বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ব্লকচেইন হল একটি ডেটাবেস যা প্রতিটি লেনদেনের একটি রেকর্ড রাখে। প্রতিটি নতুন ব্লককে পূর্ববর্তী ব্লকের সাথে সংযুক্ত করা হয়, যা ডেটাবেসকে নিরাপদ রাখে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন করার জন্য একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট প্রয়োজন। একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট হল একটি ডিজিটাল ওয়ালেট যা ক্রিপ্টো সংরক্ষণ করে। লেনদেন করার সময়, ব্যবহারকারীরা তাদের ওয়ালেট থেকে ক্রিপ্টো পাঠায় বা গ্রহণ করে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনগুলি নিরাপদ এবং নিশ্চিত করার জন্য, এনক্রিপশন ব্যবহার করা হয়। এনক্রিপশন হল একটি প্রক্রিয়া যা ডেটাকে একেবারে অস্পষ্ট করে তোলে, যা এটিকে অবৈধ অ্যাক্সেস থেকে রক্ষা করে। ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনগুলি সাধারণত একটি পাবলিক-কী ক্রিপ্টোগ্রাফি সিস্টেম ব্যবহার করে এনক্রিপ্ট করা হয়। এই সিস্টেমে, প্রত্যেকের কাছে একটি পাবলিক কী এবং একটি ব্যক্তিগত কী থাকে। পাবলিক কী টি যে কেউ ব্যবহার করতে পারে, তবে ব্যক্তিগত কীটি শুধুমাত্র মালিকের কাছেই পরিচিত।
ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনগুলি নিশ্চিত করার জন্য, একটি বিতর্কিত প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। বিতর্কিত প্রক্রিয়াটি হল একটি প্রতিযোগিতা যেখানে কম্পিউটারগুলি জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। যে কম্পিউটারটি প্রথম সমস্যাটি সমাধান করে, সে একটি নতুন ব্লক তৈরি করে এবং ব্লকচেইনে যোগ করে। ব্লকচেইনে যোগ করার জন্য, কম্পিউটারটি একটি নতুন মুদ্রা একক (coin) পায়। এই প্রক্রিয়াটিকে “মাইনিং” বলা হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। তারা দ্রুত এবং সস্তা লেনদেনের অনুমতি দেয়, এবং তারা সরকার বা ব্যাংকের মতো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভরশীল নয়। যাইহোক, ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তারা এখনও অপেক্ষাকৃত নতুন এবং অস্থির, এবং তারা জালিয়াতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির কিছু সুনির্দিষ্ট উদাহরণ হল বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, এবং লিটকোইন। এই ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং তাদের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির ভবিষ্যত এখনও অনিশ্চিত। তারা আরও ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা হতে পারে, বা তারা একটি ক্ষণস্থায়ী প্রবণতা হতে পারে। যাইহোক, ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি আর্থিক প্রযুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবর্তন প্রতিনিধিত্ব করে, এবং তারা অর্থপ্রদানের ভবিষ্যতকে আকার দিতে পারে।
কিছু জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি তালিকা
বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন কার্য সম্পাদনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে। নিচে আমরা জনপ্রিয় কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম তুলে ধরলাম।
- বিটকয়েন
- ইথেরিয়াম
- লাইটকয়েন
- ডজকয়েন
- মনেরো
- ডট
- বিএনবি
- এঞ্জিন কয়েন
আশা করি ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে ব্যাসিক যা জানা দরকার সেটা আপনারা বুঝতে পেরেছেন। আপনাদের যদি বিশেষ কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন কিংবা অন্য কোন টপিক নিয়ে আমাদের আর্টিকেল দেখতে চাইলেও জানাতে পারেন।