বর্তমানে ইন্টারনেট দুনিয়ায় ক্রিপ্টো কারেন্সি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বেশ তুঙ্গে। এই বিশেষ কারেন্সির প্রচলন ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবল। দিনে দিনে ক্রিপ্টো কারেন্সির মূল্য অবিশ্বাস্য ভাবে বৃদ্ধি পাওয়াতে নেটিজেনদের কাছে এর চাহিদা আকাশচুম্বী। ক্রিপ্টো মাইনিং করে সফলতা পেয়েছে এমন মানুষ নেহাতই কম নয়।
ক্রিপ্টো হচ্ছে একধরনের কারেন্সি বা মুদ্রা। এই বিশেষ মুদ্রা কোন প্রকারের ফিজিক্যাল লেনদেন ছাড়াই অনলাইনে ঘুরে বেড়ায়। ক্রিপ্টো মাইনাররা বিশেষ এক মাইনিং প্রক্রিয়ায় একেকটি কয়েন জেনেরেট করে থাকে, এর হিসেব জটিল সব এলগরিদম, ব্লক এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি দ্বারা করা হয়।
সম্প্রতি, ফোর্বস তাদের বার্ষিক ক্রিপ্টো বিলিয়নেয়ারদের তালিকা প্রকাশ করেছে। বলাবাহুল্য ডিজিটাল দুনিয়ায় সম্পদশালীদের সংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তালিকাটিতে ১৯ জন ক্রিপ্টো বিলিয়নেয়ারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যা গেলো বছরের তুলনায় প্রায় ৫৮% বেড়েছে।
গত, ৫ই এপ্রিল এই ক্রিপ্টো বিলিয়নেয়ারদের নাম প্রকাশের পর জানা যায়, ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রিতে যারা আগে প্রথম সারিতে ছিলেন, এখনও তারা তাদের স্ব স্ব অবস্থানেই আছেন।
বাইন্যান্সের সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা চাংপেং জাও বরাবরের মতো ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রিতে ধনীদের শীর্ষে অবস্থান করছেন। একই সাথে বিশ্বের ১৯ তম ধনী হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছেন। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক $৯৬ বিলিয়ন থেকে ৬৫ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেলেও, তিনি ফোর্বসের ক্রিপ্টো বিলিয়নেয়ারদের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে আছেন।
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন “ক্রিপ্টো রবিন হুড” নামে ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত FTX – এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান স্যাম ব্যাংকম্যান-ফ্রাইড। তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় $২৪ বিলিয়ন। তিনি বরাবরই একটা কথা বলেন যে তার এই সম্পদের বেশিরভাগই দান করে দিতে চান, সেজন্য অনেকে তাকে ক্রিপ্টো রবিন হুড বলে অভিহিত করেন। আদৌতে, এই সম্পদের দান করার ব্যাপারে স্পষ্ট কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তৃতীয় অবস্থানে আছেন কয়েনবেজের প্রধান এবং প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান আর্মস্ট্রং। তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় $৬.৬ বিলিয়ন। রিপলস এর প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস লারসেন এবং ক্রিপ্টো কারেন্সি এক্সচেঞ্জ ওয়ালেট Gemini – এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা উইংকলেভস টুইন প্রায় $৪ বিলিয়ন সমমূল্যের সম্পদ নিয়ে তালিকায় যৌথভাবে অবস্থান করছেন।
পিছিয়ে নেই নতুনরাও, ক্রিপ্টো বিলিয়নেয়ারদের তালিকায় নতুনদের মধ্যে রয়েছেন FTX-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান টেকনোলজি অফিসার গ্যারি ওয়াং। তার কোম্পানিতে ১৬% শেয়ার থেকে প্রায় $৫.৬ বিলিয়ন সমমূল্য পরিমাণ সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্লকচেইন এবং ওয়েব ৩.০ (WEB 3.0) কোম্পানি আলকেমির সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিকিল বিশ্বনাথ ও জোসেফ লাউ দম্পতির প্রত্যেকের সর্বমোট $২.৪ বিলিয়ন মূল্যের সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা তালিকার একাদশে অবস্থান করছে।
OpenSea NFT মার্কেটপ্লেস সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডেভিন ফিঞ্জার এবং অ্যালেক্স আতাল্লা এই বছরের ক্রিপ্টো-বিলিয়নদের তালিকায় নবাগত ব্যক্তি যার আনুমানিক নেট মূল্য $২.২ বিলিয়ন।
তালিকায় আরও উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তির নাম রয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার আপবিট এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সং চি-হিউং, যার সম্পদের নেট মূল্য $৩.৭ বিলিয়ন। এবং, দক্ষিণ কোরিয়ার ডুনামু’র নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট, কিম হিউং-নিয়ন, আপবিটের আনুমানিক ১৩% শেয়ারের মালিক, যা $১.৯ বিলিয়ন নেট মূল্যের সমমান।
সফটওয়্যার ফার্ম মাইক্রোস্ট্র্যাটেজি ইনকর্পোরেশন এর প্রধান মাইকেল স্যালর $১.৬ বিলিয়ন আনুমানিক সম্পদ নিয়ে বরাবরের মতো ক্রিপ্টো বিলিয়নেয়ার তালিকায় রয়েছেন। নিজেদের অনুকূলে একটি বড় বিটকয়েন বাজিতে সাফল্য আসার পর, গত দুই বছরে কোম্পানির স্টক চারগুণ বেড়েছে।
উল্লেখ্য, ফোর্বস ২০১৮ সালে প্রথম ক্রিপ্টো বিলিয়নেয়ার’দের তালিকা প্রকাশ করেছিল যখন মাত্র কয়েকজন এক্সিকিউটিভ গ্রেড তৈরি করেছিলেন। সেই সময়, তালিকা পেতে $৩৫০ মিলিয়ন সম্পদের সমপরিমাণ নেট মূল্য থাকা আবশ্যক ছিলো।