কয়েন আলাপে আজকের আলোচনা কিভাবে আপনি আপনার স্ট্র্যাটেজি তৈরি করবেন তা নিয়ে । চলুন দেড়ি না করে জেনে নেয়া যাক কেন এবং কিভাবে আপনি আপনার স্ট্র্যাটেজি তৈরি করবেন ।
কেন নিজের স্ট্র্যাটেজি থাকা প্রয়োজন ?
শুরুতেই জেনে নিতে হবে কেন আপনার একটি স্ট্র্যাটেজি থাকাটা প্রয়োজনীয় । নিজের একটি স্ট্র্যাটেজি থাকাটা অনেক সুবিধাদায়ক । স্ট্র্যাটেজি থাকলে আপনি বেশিরভাগ সময়ই বড় ধরনের লসের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন । আপনি কোথায় এবং কিভাবে বিনিয়োগ করবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার । তবে আপনার যদি একটি স্ট্র্যাটেজি থাকে তাহলে আপনি বিনিয়োগ করে লসের সম্মুক্ষীন হবেন না । বর্তমানে আপনি যেটুকু লাভ করছেন তাও প্রায় দ্বিগুন বৃদ্ধি পাবে স্ট্র্যাটেজির কারনে ।
স্ট্র্যাটেজি আসলে কি ?
আমাদের সকলেরই একটা লক্ষ্য থাকে । সেই লক্ষ্য অনুযায়ী সাজিয়ে, গুছিয়ে কোন কাজ করাকে বা লক্ষ্যে পৌঁছানোকেই মূলত স্ট্র্যাটেজি বলে । ট্রেডিং বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজি বলতে মূলত সময়কাল, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, এন্ট্রি-এক্সিট পজিশন, পোর্টফলিও ম্যানেজমেন্টকে বুঝায় । এক কথায় বলতে গেলে সঠিক এবং সুন্দরভাবে বিনিয়োগ করাটাই স্ট্র্যাটেজি ।
সময়কাল আবার কি?
সময়কাল বলতে মূলত সময়কে বুঝানো হয় । মুলত আপনার বিনিয়োগটি লক্ষ্যে পৌঁছাতে কতদিন বা কতমাস সময় লাগবে তা হিসেব করে নেয়াটা এই অংশের কাজ । ট্রেডিং অনুযায়ী সময়কাল দু’ধরনের, “ডেইলি” এবং “শর্ট টার্ম” । আর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে “মিড টার্ম” এবং “লং টার্ম” কে হিসেব করা হয় । নাম থেকেই বুঝতে পারতেছেন এগুলো মূলত কতটুকু সময়ের হয়ে থাকে । ডেইলি বলতে দিনেরটা দিনে, শর্ট টার্ম সর্বোচ্চ ৯০ দিনের, মিড টার্ম ৬ মাস আর ১ বছরের বেশি সময়কালকে লং টার্ম বিনিয়োগ বলা হয় । এই চারটি সময়কাল হিসেব করেই মূলত স্ট্র্যাটেজির প্রথম অংশ সাজানো হয় ।
এন্ট্রি-এক্সিট পজিশন কি ?
নাম থেকেই বুঝতে পেরেছেন এটি মূলত আপনার বিনিয়োগে প্রবেশ এবং বিনিয়োগ থেকে বের হয়ে যাওয়াকে বুঝিয়েছে । এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি । কোন কয়েনে বিনিয়োগের পূর্বে অবশ্যই এটিতে নিজেকে ভালভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে । তাহলেই বিনিয়োগ থেকে লাভ করাটা সহজ । এটির মাধ্যমে একটি বিনিয়োগ থেকেই ৩০% এর বেশি লাভ করা সম্ভব ।
রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কি ?
আপনি হয়তো এই শব্দটির সাথে পরিচিত । গুগোল, ইউটিউব বা বিভিন্ন জায়গায় এই শব্দটি অনেক শুনেছেন । বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটি আপনাকে বড় ধরনের লসের হাত থেকে রক্ষা করবে । কোন কয়েনে বিনিয়োগ করার পর সেই কয়েনের মূল্য হ্রাস পেতে থাকলে তখন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কাজে আসে । কেবল লসের সময়ই নয় বরং লাভের সময়ও এটি কাজে আসে । এটির সাহায্যে কোন কয়েন থেকে অত্যধিক লাভ করা সম্ভব । এটি আপনার স্ট্র্যাটেজিকে ত্রুটিমুক্ত করতে এটি সহায়তা করবে ।
পোর্টফলিও ম্যানেজমেন্ট কি ?
অনেকের ক্ষেত্রেই এটি একটি নতুন শব্দ । এটি যেমন ভারী একটি শব্দ ঠিক তেমনি এর গুরুত্বও ততোটাই বেশি । পোর্টফলিও বলতে মূলত আপনার মোট বিনিয়োগকে বুঝায় । অর্থনীতিতে একটি প্রবাদ আছে “Never put your all eggs in a basket” অর্থাৎ “কখনও আপনি একটি ঝুড়িতে সকল ডিম রাখবেন না ।” এটি কেন বললাম, তাই তো ? আমি অনেককেই দেখেছি তারা তাদের সম্পূর্ণ বিনিয়োগ নিয়ে একটি কয়েনেই ঝাপিয়ে পড়েন । যার ফলে অন্য কোন কয়েনে লাভ করার সুযোগ থাকলেও সে সেটি করতে পারে না । আবার অনেক সময় অনেকে লসেই সেই কয়েন বিক্রি করে দেয় । এমন সময় দেখা যায় আসলে তার যতটুকু লস হবার কথা ছিলো তার থেকে বেশি পরিমানে লস হয়ে গেছে । যার ফলে আপনাকে পোর্টফলিও ম্যানেজমেন্ট করতে হবে । নতুন অবস্থায় অবশ্যই সর্বনিম্ন ৩টি কয়েনে বিনিয়োগ করতে হবে ।
নতুন হিসেবে স্ট্র্যাটেজি কেমন হবে ?
নতুন হিসেবে আপনার উচিত হবে শর্ট টার্মের জন্য স্ট্র্যাটেজি বানানো । তারপর ধীরে ধীরে সেটাতে বিভিন্ন পরিবর্তন আনার মাধ্যমে মিড টার্ম এবং লং টার্মকে যুক্ত করা । আপনি যখনই কোন কয়েনে বিনিয়োগ করবেন তখন অবশ্যই স্ট্র্যাটেজির মাধ্যমেই করার চেষ্টা করবেন । এতে করে আপনার স্ট্র্যাটেজি আরও শক্তিশালী হবে এবং আপনার বিনিয়োগ নিরাপদ হবে । নতুন অবস্থায় ডে ট্রেডিং এবং লং টার্ম বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে । কিছুটা অভিজ্ঞ হবার পরেই এই দুটিতে বিনিয়োগ করবেন । মিড টার্মে তুলনামূলক একটু কম বিনিয়োগ করার চেষ্টা করবেন ।
শুরুতেই আপনাকে লক্ষ্য নিতে হবে পোর্টফলিও বৃদ্ধি করার দিকে । তারপর সেখান থেকে কিভাবে একটা মাসিক খরচ বের করবেন সেটার দিকে মনোযোগ দিবেন । বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মনে রাখবেন “লস না করাটাই সর্বপ্রথম এবং সর্বোচ্চ লাভ ।” তাই কিছুদিন সময় নিয়ে এখনই আপনি আপনার স্ট্র্যাটেজি বানানো শুরু করে দিন । অবশ্যই কয়েন এবং সময়কাল অনুযায়ী স্ট্র্যাটেজি কিছুটা পরিবর্তন হবে তবে পুরোপুরি নয় ।