বিভিন্ন সাইবার ক্রিমিনালদের বিটকয়েন জব্দ করে বর্তমানে আমেরিকা সরকার বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ বিটকয়েন এর মালিক। গত কয়েকদিন আগের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকা সরকার বর্তমানে ২ লক্ষ ৫ হাজারের বেশি বিটকয়েন এর মালিক। সেই হিসেবে, সাতোশি নাকামোতোকে বাদ দিলে, আমেরিকা সরকার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিটকয়েন এর মালিক।
এইসব বিটকয়েন এসেছে বিভিন্ন সাইবার অপরাধীদের থেকে জব্দ করার মাধ্যমে। সর্বপ্রথম, সিল্করোডের একজন থেকে তারা ৬৯৩৬৯ বিটকয়েন জব্দ করে। কিছুদিন আগে, সিল্ক রোডের সাথে সম্পৃক্ত তথা হ্যাকার জেমস জোং এর কাছ থেকে আরো ৫০০০০ বিটকয়েন জব্দ করে। জেমস জোং মূলত সিল্ক রোড থেকে উক্ত বিটকয়েন হ্যাক করেছিল।
সিল্ক রোড ছিল একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস। ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তারা তাদের ওয়েবসাইট চালায়। ডার্কওয়েবের মাধ্যমে এই মার্কেটপ্লেস চলত। সিল্ক রোডের প্রতিষ্ঠাতা রস। সিল্ক রোডে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসের সাথে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য লেনদেনের প্রচলন ছিল যার কারনে আমেরিকা ২০১৩ সালে সিল্ক রোড এবং তাদের কাছে থাকা বিটকয়েন জব্দ করে। প্রাসঙ্গিক, সিল্ক রোডে লেনদেনের মূল কারেন্সি/মুদ্রা ছিল বিটকয়েন।
মূল কথায় ফিরে আসা যাক। আমেরিকা বর্তমানে সিল্ক রোড থেকে জব্দকৃত বিটকয়েন থেকে ৪১৫০০ বিটকয়েন বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যার বর্তমান বাজারমূল্য ১.১৮ বিলিয়ন ডলার। বিটকয়েন বিক্রয়ের কথা সম্প্রতি একটি কোর্ট ডকুমেন্ট থেকে জানা যায়।
কোর্টের উক্ত ডকুমেন্ট থেকে জানা যায়, আমেরিকা সিল্ক রোডের প্রতিষ্ঠাতা রস থেকে প্রাপ্ত বিটকয়েন বিক্রয় শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে, তারা ৯ হাজার এর বেশি বিটকয়েনহ বিক্রয় করেছে। ২০২৩ সালের ১৪ই মার্চ তারা ৯৮৬১ বিটকয়েন বিক্রয় করে প্রায় ২১৫ মিলিয়ন ডলার পায়। তারা সর্বমোট ৫১ হাজার ৩৫২ বিটকয়েন বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে আরো ৪১৫০০ বিটকয়েন রয়েছে যেগুলো তারা এই বছর সর্বমোট ৪ ধাপে বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রাসঙ্গিক কারণে, আমেরিকা এইবারই প্রথম জব্দকৃত বিটকয়েন বিক্রয় করছে না। সিল্ক রোড থেকে প্রাপ্ত বিটকয়েন সর্বপ্রথম ২০১৪ সালে বিক্রয় করে আমেরিকা। তবে, তখন বিক্রয় করেছিল নিলামের মাধ্যমে। তখন তারা ৩০,০০০ বিটকয়েন বিক্রয় করেছিলো। ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট, টিম ড্রাপার তখন নিলামে অংশগ্রহণ করে এবং উক্ত বিটকয়েন সর্বোচ্চ দাম দিয়ে ক্রয় করে নেয়।
বিটকয়েন এর দাম কি প্রভাবিত হবে?
বিটকয়েন এর দাম বৃদ্ধি কিংবা কমে যাওয়ার পিছনের কারণ হল বিটকয়েন এর চাহিদা অনুযায়ী যোগান থাকা কিংবা না থাকা। আমেরিকার কাছে থাকা বিটকয়েন সার্কুলেশনে থাকলেও যেহেতু উক্ত বিটকয়েনগুলো জব্দকৃত বিটকয়েন ছিল, তারা চাইলেই সেগুলো বিক্রয় করতে পারতো না। সুতরাং, উক্ত বিটকয়েন সার্কুলেশনের বাইরেই ছিল। যখন আমেরিকা এইগুলো ৪ ধাপে বিক্রয় করবে তখন সেগুলো সার্কুলেশনে চলে আসবে। যদিও এর প্রভাব কেমন হবে তা বলা মুশকিল, তবে, ৫০০০০ বিটকয়েন হোল্ডে থাকা অবস্থা থেকে মার্কেটে আসা মানে, দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আবার, তারা যেহেতু ধাপে ধাপে বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এইটা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে বলেও মনে হয় না।