বিটকয়েনের জনক (বিটিসি), সাতোশি নাকামোতো, আজীবনই থেকেছেন এক রহস্য হয়ে। আজ অবধি একটা নাম থেকেও রয়ে গেছেন বেনামী হয়ে। তাই যৌক্তিকতার সাপেক্ষে আপনি ভাবতেই পারেন এমন কারো জন্মদিন আপনি কীভাবে জানতে পারলেন বা উদযাপন করতে পারলেন?
উত্তরটা কৌশলগতভাবে সহজ আবার বেশ কঠিনও বটে। যে সময়টাতে তিনি বা তারা P2PFoundation.ning.com-এ তার/তাদের বিখ্যাত ছদ্মনামটি নিবন্ধন করেছিলেন তখন মূলত তিনি বা তারা তার বা তাদের জন্মদিনটি ৫ এপ্রিল হিসেবেই কিন্তু নিবন্ধিত করেছিলেন।
কেন ৫ এপ্রিল?
P2P ফাউন্ডেশন মূলত একটি ইন্টারনেট ফোরাম যেখানে এই রহস্যমানব সাতোশি নাকামোতো প্রথম বিটকয়েন আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার দেয়া এই নামটি আসল ছিল না বলেই অনেকে মনে করেন। অতএব, তার দেয়া জন্মদিনটিও হয়তো আসল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখা উচিৎ, এই মাস্টারমাইন্ড গ্রুপ কিংবা ব্যক্তি যেকোনো কিছু হুট করেই বেছে নিবেন না।
একটু অর্থনীতির ইতিহাস ঘাটলে জানা যাবে ৫ এপ্রিল মার্কিন মূদ্রার ইতিহাসে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ১৯৩৩ সালের এই দিনেই মার্কিন রাষ্ট্রপতি ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের “এক্সিকিউটিভ অর্ডার ৬১০২” এর বর্ষপূর্তি। এই আদেশের মধ্য দিয়ে স্বর্ণমুদ্রা, বুলিয়নের ব্যক্তিগত মালিকানা বা “মজুত”কে অবৈধ ঘোষণা করেছিল দেশটি। খুব অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে শিল্প-বাণিজ্যে সে সময় ১০০ ডলারের কম মূল্যের গোল্ড কয়েন/গোল্ড সার্টিফিকেট রাখার অনুমতি ছিলো যা এই আইনের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটে।এই আদেশের ফলে আমেরিকান নাগরিকদের ডলারের বিনিময়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সোনা হস্তান্তর করতে হয়েছিলো।কেউ কেউ এক্সিকিউটিভ অর্ডার ৬১০২ কে স্বর্ণের আকারে তাদের সম্পদ সংরক্ষণের জন্য ব্যক্তির স্বাধীনতার প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখলেও এই আইনটি দেশটিকে একটি কঠিন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সাহায্য করেছিলো।
তাহলে সারাংশ কী দাঁড়াচ্ছে?
এই কথা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারিনা না যে, সাতোশি নাকামোতো ঠিক এই কারণেই তার/তাদের জন্মদিন ৫ এপ্রিল বেছে নিয়েছিলেন, তবে আমরা জানি যে বিটকয়েনের জনকের/জনকদের অর্থনৈতিক ইতিহাস নিয়ে ছিলো ব্যপক আগ্রহ। এছাড়াও জনসাধারনের সম্পদ সংরক্ষণ এবং রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ থেকে তাদের সম্পদ সুরক্ষিত রাখার বিষয়েও তার/তাদের উদ্বিগ্নতার ধারণা পাওয়া যায় । বিটকয়েনের মূল্য প্রস্তাবকে প্রায়ই “ডিজিটাল গোল্ড” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিগত সোনার মালিকানার ইতিহাসের আরেকটি সম্ভাব্য ইঙ্গিত তিনি/তারা রেখেছিলেন,তার/তাদের জন্ম সাল ১৯৭৫ হিসাবে তালিকাভুক্ত করে। সেই বছরই রাষ্ট্রপতি জেরাল্ড ফোর্ড এক্সিকিউটিভ অর্ডার ৬১০২ কে উল্টে দিয়েছিলেন। একজন গ্রাহক যতটুকু চায় ততটুকু সোনার মালিক হওয়াকে বৈধ করে তুলেছিলেন।
এসব গুচ্ছ ধারণা থেকে মনে একবার হলেও উঁকি দেয়, আসলেই ৫ এপ্রিল কি বিশেষ কোন দিন হিসেবেই নিবন্ধিত হয়েছিলো নাকি এটা নিছকই একটা তারিখ যেটা মানুষ দিতে হয় বলেই দেয়? তার পাশাপাশি এটাও আমাদের মাথায় আসে, এপ্রিল মাসেই “এপ্রিল ফুল” পালিত হয়।
এতকিছু ছাপিয়ে আবার এমনও হতে পারে, সাতোশি নাকামোতো হয়তো কোন দলভুক্ত ছদ্মনাম নয়। তিনি একজন ইন্ডিভিজুয়াল মানুষ এবং তার জন্ম সম্ভবত ১৯৭৫ সালের ৫ এপ্রিল।
হতেও পারে এমন, আবার না হলেও ক্ষতি নেই। কিছু মানুষ তার কর্মের মধ্য দিয়েই বাঁচে পুরোটা জীবন। প্রতিটি দিনই তাদের জন্মদিন পালিত হয় তাদের কর্মের মধ্য দিয়ে। সব দ্বিধাদ্বন্দ্বের বাইরে গিয়ে এতটুকু সত্য, তিনি/তারা একজন কিংবা একেকজন মাস্টার মাইন্ড ছিলেন, মানুষ হয়েই তিনি/তারা জন্মেছিলেন এবং হয়েছিলেন “মায়েস্ট্রো”। ৩৬৫ দিনের কোন একদিনেই তিনি/তারা পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং যেদিনই এসেছিলেন সেদিনের জন্য রইলো তাদের কিংবা তাকে ❝ শুভ জন্মদিন❞।