Connect with us

বিটকয়েন

বিয়ার মার্কেটের অবসান; বুলরান শুরু?

Published

on

বিটকয়েন কিংবা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম আসলেই কি কেউ সঠিকভাবে নিশ্চয়তার সাথে অনুমান করতে পারে? যদি কেউ আমাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে তাহলে এর উত্তর হবে ❝না❞। এই উত্তর ক্রিপ্টোকারেন্সি ছাড়াও অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রেও আসলে প্রযোজ্য। তবে, অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি বা অন্যান্য সম্পদের দাম নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করে থাকেন যা ভবিষ্যতে মিলতেও পারে, আবার নাও মিলতে পারে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি গণমাধ্যম কয়েনডেস্কের একজন প্রতিনিধির (আন্দ্রে এডস্টোর্ম) মতামত নিয়ে আমাদের এই আর্টিকেল যেখানে তিনি তুলে ধরেছেন, কেন বিটকয়েন এর বিয়ার মার্কেট এর অবসান হয়েছে এবং কেন তিনি মনে করে বিটকয়েন বুলরান শুরু হতে চলেছে। এই আর্টিকেল বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত এবং অতীত রেকর্ডের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে। বিটকয়েন বিনিয়োগ এর জন্য আমাদের এই আর্টিকেল কোনভাবেই উপদেশ হিসেবে নেয়া যাবে না। যদি কেউ নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে, কয়েনআলাপ কোনক্রমেই দায়ী থাকবে না।

২০১৮-১৯ বিয়ার মার্কেটের তুলনায় ২০২২-২৩ সালের বিয়ার মার্কেট আসলে সংক্ষিপ্ত বলা চলে। তবে, দুইটা বিয়ার মার্কেটই মানুষকে একইরকম উদ্বিগ্নতায় ফেলেছে। কারণ, যারা দীর্ঘ সময় ধরে বিটকয়েন হোল্ড করছেন, তাদের জন্য বিটকয়েন এর দাম ২০ হাজার ডলার থেকে ৪ হাজার ডলারের নিচে নেমে যাওয়াটা যেমন সহজ ছিল না, ঠিক তেমন ৬৯ হাজার ডলার থেকে ১৫ হাজার ডলারে নেমে যাওয়াটাও আসলে খুবই কঠিন ছিল। আন্দ্রে এডস্টোর্ম ২০১৮-১৯ সালের বিয়ার মার্কেট থেকেই বিটকয়েন হোল্ড করে আসছেন। তিনি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কয়েনডেস্কে শেয়ার করেছেন কেন বর্তমান বিয়ার মার্কেটের অবসান হয়েছে। নিচে আমরা সেগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা করব।

বিটকয়েন হাভিং খুবই সন্নিকটে

বিটকয়েন এর সরবরাহ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে তবে সেটা একটা নির্দিষ্ট হারে। প্রতিটি বিটকয়েন ব্লক যখন বিটকয়েন ব্লকচেইনে যোগ হয়, মাইনিং রিওয়ার্ড হিসেবে মাইনার কিছু বিটকয়েন পেয়ে থাকে। এই বিটকয়েনগুলো নতুন করে বিটকয়েন এর মোট সরবরাহে যোগ হয়ে থাকে। তবে, এই মাইনিং রিওয়ার্ড সবসময় একই থাকে না। প্রতি চার বছর পর পর অর্ধেকে নেমে আসে। শুরুটা হয়েছিল প্রতিটা নতুন ব্লকের জন্য ৫০ বিটকয়েন দিয়ে। তারপর প্রতি চারবছরে সেটা অর্ধেক হতে হতে বর্তমানে প্রতি ব্লকে ৬.২৫ বিটকয়েন করে মাইনার পায়। সর্বশেষ ২০২০ এ হাভিং হয়েছিল। পরবর্তী হাভিং থেকে আমরা এখন মাত্র ১ বছর দূরে আছি। আগামী বছরের এপ্রিল কিংবা মে মাসের মধ্যেই পরবর্তী হাভিং হবে। তখন বিটকয়েনের সরবরাহের হার কমে যাবে কারণ তখন প্রতিটা ব্লকের জন্য মাইনার ৬.২৫ বিটকয়েনের পরিবর্তে ৩.১২৫ বিটকয়েন পাবে। ২০১৬ এবং ২০২০ সালের হাভিং এর পরে বিটকয়েনের দামের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো তখন আসলে বিটকয়েনের দাম কি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিটকয়েন এর ব্যবহার বা চাহিদা কমে না, বরং বৃদ্ধি পায়। যদি আমরা দৈনিক বিটকয়েন এর চাহিদা স্থির ধরি, তাহলে সে অনুযায়ী হাভিং এর পর বিটকয়েন এর সরবরাহ অর্ধেক হওয়ার কারণে বাজারে বিটকয়েনের স্বল্পতা দেখা দেবে যা বিটকয়েনের দামে প্রভাব ফেলবে খুব বেশি। পূর্ববর্তী রেকর্ড দেখলে আমরা এই প্রভাবটা খুব ভালোভাবেই দেখতে পাই।

বিটকয়েন হোল্ডার বৃদ্ধি পাওয়া

বিটকয়েনের দাম যখন বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন অনেক নতুন বিনিয়োগকারী মার্কেটে প্রবেশ করে এবং যখন বুলরান শেষ হয়, তখন তাদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। বর্তমানে মার্কেটে এই ধরনের বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা খুবই কম। বিটকয়েন অন চেইন এনালাইসিস থেকে দেখা যায় বর্তমানে মার্কেটে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী দীর্ঘদিন ধরে বিটকয়েন হোল্ড করছে। এটা বিটকয়েনের দামের উর্ধ্বগতির একটা চিহ্ন। কারণ, দীর্ঘসময় ধরে হোল্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া মানে মার্কেটে বিটকয়েন এর সরবরাহের স্বল্পতা দেখা যাওয়া।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

২০১৪-১৫ সালের বিয়ার মার্কেটের দিকে যদি আমরা তাকাই, তখন বিটকয়েনের দাম গড়ে ৩৫০ ডলারের কাছাকাছি ছিল যা পরবর্তীতে ২০০ ডলারে নেমে যায় অল্প সময়ের ব্যবধানে। ২০১৮-১৯ এ ৬ হাজার ডলারের কাছাকাছি অনেকদিন থাকার পর সেটা খুব দ্রুত একদিনে ৪ হাজার ডলারের নিচে নামে। একইভাবে, ২০২২-২৩ সালে বিটকয়েনের দাম ৩০ হাজার ডলারের কাছাকাছি ছিল বেশ কিছু দিন এবং হঠাৎ সেটা ১৬ হাজার ডলারের নিচে নেমে আসে। এই তিনটা আলাদা আলাদা সময়ের মধ্যে একটা মিল আছে। বিটকয়েনের দাম একটা নির্দিষ্ট দামে অনেকদিন থাকার পর সেটা খুব দ্রুত সময়ে অর্ধেক হয়ে যাওয়া। এইরকম অবস্থাকে বলা হয় Capitulation, মানে আত্নসমর্পণ করা। বিটকয়েন এর দাম যখন কমতে থাকে তখন আর অনেক কমে যাবে ভেবে বর্তমানে যা আছে তাই নিয়ে নেয়া ভালো এই চিন্তা থেকে মানুষ তাদের কাছে থাকা বিটকয়েন বিক্রয় করে দেয়। এই প্রক্রিয়াটাই হল আআত্মসমর্পণ করা। যেহেতু ২০২২-২৩ সালের এই স্টেজ আমরা দেখে ফেলেছি তাহলে বলাই যায় বুল মার্কেট হয়ত অতি শীঘ্রই দেখা যেতে পারে কারণ, আগের সালগুলোর আত্নসমর্পণ পর্যায় থেকেই বিটকয়েনের বুলরান শুরু হয়েছিল।

১৬ হাজার ডলার কি ফিরে আসবে?

বিটকয়েনের গত বুলরান থেকে এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার সর্বনিম্ন দাম যেটাকে ধারণা করা হচ্ছে Capitulation বা আত্নসমর্পণ পর্যায় হিসেবে। পূর্বে এইরকম অবস্থায় বিটকয়েনের দাম দুইবার নামতে দেখা যায় নি। অর্থাৎ, Capitulation স্টেজ/পর্যায় শেষ হওয়ার পর বিটকয়েনের দাম আর সর্বনিম্ন দামে নামে নি। যদি এইরকম পর্যায়ে বিটকয়েনের দাম আবার আসতে হয়, তাহলে প্রচুর পরিমাণ লিকুইডেশন লাগবে, যা খুব বড় কোন অর্থনৈতিক বিপর্যয় ছাড়া সম্ভব না।

FUD বা খারাপ সংবাদ বিটকয়েনের দামে বেশি প্রভাব ফেলবে না

গতবছর মার্কেটে অনেকগুলো খারাপ সংবাদ ছিল। টেরা লুনার ধ্বংস, এফ.টি.এক্স এর দেউলিয়া কিংবা এইরকম আরো অনেকগুলো প্রজেক্টের দেউলিয়া হওয়ার সংবাদ গতবছর মার্কেটে খুব সাধারণ ছিল যা বিটকয়েনের দামকে খুব বেশি বাজেভাবে প্রভাব ফেলেছে। তবে, এই বছর মার্কেটে খারাপ সংবাদ থাকা সত্ত্বেও মার্কেটে এর প্রভাব খুব বেশি হচ্ছে না। জেনেসিসের দেউলিয়া ঘোষনা কিংবা বাইন্যান্সের অবৈধ কারসাজির বিরুদ্ধে মামলা, কোনটাই মার্কেটে খুব বেশি প্রভাব ফেলে নি। খুব বড় কোন খারাপ সংবাদ না হলে বিটকয়েনের বর্তমান অবস্থান থেকে নিচের দিকে যাওয়াটা অনেকটাই অস্বাভাবিক।

পরিশেষ

আমি আগেই বলেছি এই লেখাটা একজন ব্যক্তির মতামত তুলে ধরা বৈ আর কিছুই নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি যদিও মনে করি বিটকয়েনের এই সাইকেলের সর্বনিম্ন দাম এখনো আমরা দেখি নি, মানে বিটকয়েনের দাম আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার মত নয়। তবে, উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে এইটাও বলা যায়, আমরা সম্ভবত বুলরানের শুরুতে আছি। হয়ত এইখান থেকে বিটকয়েন আর খুব বেশি নিচে যাবে না।

আবারো বলছি, আমাদের আর্টিকেল থেকে কেউ অনুপ্রাণিত হয়ে বিনিয়োগ করে যদি ক্ষতির সম্মুখীন হয়, আমরা অবশ্যই এর জন্য দায়ী থাকবো না। নিজ জ্ঞান এবং বুদ্ধি দিয়ে গবেষণা করে তবেই সবার বিনিয়োগ করা উচিত।

Continue Reading
Advertisement
Click to comment

মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ট্রেন্ডিং পোস্ট

Copyright 2021-23. All rights reserved © coinalap.com

আমাদের সংবাদ সবার আগে পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন।